শফিউল আলম, রাউজান »
রাউজান উপজেলার ১নং হলদিয়া ইউনিয়নের এয়াসিন নগর, সিংহরিয়া, বরচনা, নন্দগাঁও, বৃন্দাবনপুর, বৃক্ষভানুপুর, হলদিয়া, শিরনী বটতল, এলাকার পাহাড়-টিলা শ্রেণির ভূমি বন বিভাগ থেকে নিয়ে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন হলদিয়া রাবার বাগান গড়ে তুলেন। বন বিভাগ থেকে ২ হাজার ৮ শত ৫৭ একর পাহাড়-টিলা হলদিয়া রাবার বাগান করার জন্য নেওয়া হয়। ২ হাজার ৮শত ৫৭ একর আয়তনের হলদিয়া রাবার বাগানের মধ্যে ২ হাজার ২শত ৪৬ একর আয়তন বিশিষ্ট পাহাড়-টিলা শ্রেণির জমিতে রাবার বাগান করা হয়। হলদিয়া রাবার বাগান একসময়ে বিপুল পরিমাণ রাবার উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত রাবার প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রয় বাবদ কোটি কোটি টাকা আয় করেন। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও ১৯৯৬ সালের ঘূর্ণিঝড়ে হলদিয়া রাবার বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘুর্নিঝড়ে বিপুল পরিমান রাবার গাছ বিধস্ত হওয়ার কারনে রাবার উৎপাদন কমে যায়। ঘূর্ণিঝড়পরবর্তী হলদিয়া রাবার বাগান অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয়। বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করে রাবার শিল্প কারখানার মালিকেরা। এতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত রাবারের দাম কমে যায়। ফলে রাবারের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মুল্যে উৎপাদিত রাবার বিক্রয় করতে হয়। হলদিয়া রাবার বাগান লোকসানের মুখে পড়ে। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি চাকুরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যায়। পরবর্তীতে হলদিয়া রাবার বাগানের রাবার গাছের কষ আহরণ ও আহরিত রাবার গাছের কষ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনেরা রাবার গাছের কষ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করত। ছয় বৎসর এক নাগারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাবারের কষ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে রাবার বিক্রয় করে যে টাকা আয় করেছে তা টাকা দিয়ে হলদিয়া রাবার বাগানকে একটি সম্ভবনাময় শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলে রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ। গত দেড় বৎসর থেকে ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে হলদিয়া রাবার বাগান স্থায়ী জনবল সংকট থাকার পরও অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে রাবার গাছের কষ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করে আসছে রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ২০২১ -২০২২ অর্থবছরে হলদিয়া রাবার বাগান ৬৮লাখ টাকা লাভ করেছে। ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে হলদিয়া রাবার বাগান ৪ লাখ ২৩ হাজার ১ শত ২৭ কেজি প্রক্রিয়াজাত রাবার উৎপাদন করতে সক্ষম হয় । ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে হলদিয়া রাবার বাগান চার লাখ ২৩ হাজার ১ শত ২৭ কেজি প্রক্রিয়াজাত রাবার বিক্রয় করে হলদিয়া রাবার বাগান লাভ করেছেন ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪ শত ৬৯ টাকা। চলতি অর্থবছরে রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩শত কেজি । বর্তমানে রাবার উৎপাদনের মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই দৈনিক ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার কেজি রাবার উৎপাদন হচ্ছে হলদিয়া রাবার বাগানে। শীতের প্রকোপ বাড়লে প্রতিদিন ১০ হাজার কেজি থেকে ১২ হাজার কেজি রাবার উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি অর্থবছরে হলদিয়া রাবার বাগান রাবার উৎপাদন করে কোটি টাকা লাভ করবেন বলে আশা করছেন। হলদিয়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক সুজিত রায় ভৌমিক বলেন, হলদিয়া রাবার বাগানের আয়তন ২ হাজার ৮ শত ৫৭ একরের মধ্যে ২ হাজার ২ শত ৪৬ একর আয়তনের পাহাড়-টিলা ভূমিতে রাবার গাছ রয়েছে।
হলদিয়া রাবার বাগানের ৫ শত ৭৫ একর জমি জবর দখল করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘর-বাড়ি, বৃক্ষের বাগান গড়ে তুলেছেন। জবর দখল করা জমি থেকে অল্প পরিমাণ জমি উদ্ধার করা হলে ও জবর দখলে থাকা অধিকাংশ জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলেই রয়েছে। হলদিয়া রাবার বাগানে উৎপাদনশীল রাবার গাছ রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩১টি। জীবন চক্র হারানো রাবার গাছের সংখ্যা রয়েছে ৩১ হাজার ৯ শত ২০টি। অনুউৎপাদনশীল রাবার গাছের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫ শত ৯৫। ২শত ২২ একর জমিতে নতুন করে রাবার বাগান সৃজন করা হয়েছে। হলদিয়া রাবার বাগানে স্থায়ীভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে ১২ জন, অস্থায়ী ভাবে কর্মচারী রয়েছে ৩৯ জন। রাবার গাছের কষ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করার কাজে অস্থায়ী ভাবে চুক্তিভিত্তিক টেপার ও কর্মচারি রয়েছে ১ শত ৯০ জন।