শাকিব হুসাইন :
সকাল থেকে রহিম নদীর ধারে বসে আছে। কারণ সে এবার অংক পরীক্ষায় গোল্লা পেয়েছে। অংক স্যার তার খাতায় বড় করে গরু লিখে দিয়েছেন। পরীক্ষার খাতা নিয়ে সোজা নদীর ধারে এসেছে। বাড়িতে গেলে বাবার মার তো আছেই, সেই ভয়ে নদীর ধারে মন খারাপ করে বসে আছে। হঠাৎ নদী থেকে অনেক সুন্দর মিষ্টি একটা মৎস্যকন্যা বের হয়ে এলো। রহিমকে দেখে জিজ্ঞেস করল, রহিম তুমি মন খারাপ করে বসে আছো কেন? রহিম বলল, আমি অংক পরীক্ষায় ফেল করেছি। স্যার আমার খাতায় বড় করে গরু লিখে দিয়েছে। মৎস্যকন্যা বলল, তোমার খাতায় গরু লেখাটা ঠিক হয়নি। আর তুমি মন খারাপ করে বসে থাকবেই বা কেন? এবার পারোনি পরের বার ভালো করে পড়ে ভালো পরীক্ষা দেবে। মৎস্যকন্যা বলল, তুমি আমার সাথে আমাদের রাজ্যে যাবে? সেখানকার সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসে। রহিম বলল, চল তবে। মৎস্যকন্যা ও রহিম দুজনে মৎস্যকন্যার রাজ্যে চলে গেল। মৎস্যকন্যা বলল, এটা আমাদের রাজপ্রাসাদ। এখানে আমরা থাকি। চল তোমাকে এবার আমাদের পার্কে নিয়ে যাই। দুজনে পার্কে গেল। সেখানে রহিমের সাথে আরো অনেক মৎস্যকন্যার দেখা হলো। তারা সবাই রহিমকে স্বাগত জানালো। সবাই একসাথে খেলা করতে লাগল। সেখানে তাদোর সাথে রহিম অনেক নতুন নতুন খেলা খেলল। এবার মৎস্যকন্যা বলল, চল এবার আমরা আমাদের ইশকুলে যাবো। রহিম বলল, তোমাদেরও ইশকুল আছে? মৎস্যকন্যা বলল, আছে তো। আমাদের অন্য সাগর-মহাসাগরের মৎস্যকন্যাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটা আদর্শ ভাষা লাগে না। সেই ভাষা আমরা এখান থেকে শিখি। তাছাড়া তোমার মতো অংকও আমরা শিখি। রহিম বলল, অংক শিখে তোমাদের কী কাজে লাগে? মৎস্যকন্যা বলল, এই যে দেখতে পাচ্ছো কতোগুলো দোকান, সেগুলোতে খরচ করতে হলে আমাদের মুক্তা হিসেব করে দিতে হয়। তাছাড়া আমাদের অনেক কাজেই অংকটা লাগে। আমাদের মায়ের ভাষার পরপরই আমাদের অংক শেখা জরুরি। কিন্তু আমি ঠিক তোমার মতো অংকে দূর্বল ছিলাম। মন দিয়ে পড়ে আমি এবার অংকে একশো তে নিরানব্বই পেয়েছি। মৎস্যকন্যা বলল, তাহলে তোমাকে এবার আমি অংক শেখাবো। রহিমকে মৎস্যকন্যা সব অংক বুঝিয়ে দিল। রহিম মন দিয়ে সব অংকই বুঝে নিল। এবার মৎস্যকন্যা বলল, রহিম এবার থেকে তুমি আর অংক পরীক্ষায় ফেল করবে না। রহিম বলল, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মৎস্যকন্যা। মৎস্যকন্যা বলল, রহিম এবার তোমাকে যেতে হবে। রহিমকে মৎস্যকন্যা তীরে নামিয়ে দিল। মৎস্যকন্যাকে রহিম বিদায় জানালো। ঠিক তখনই রহিমের চোখে পানির ছিটেফোঁটা এসে পড়ল।
চোখ খুলতেই রহিম দেখতে পেল তার মা তার চোখে পানি ছিটাচ্ছে। রহিমের মা বলল, কিরে রহিম, আজ না তোর অংক পরীক্ষা। আর তুই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস? মা রহিমকে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলে চলে গেল। রহিমের চোখে পড়ল বালিসের নিচে রাখা অংকবইটার দিকে। কাল গভীর রাত পর্যন্ত পড়ে একটা মৎস্যকন্যার ছবি ও অংক বইটা বালিসের নিচে রেখেছিল। রহিম পরীক্ষা দিতে গেল। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই দেখল কালকের মৎস্যকন্যার শেখানো অনকগুলোই এসেছে। রহিম খুশি মনে পরীক্ষা দিল। কিছুদিন পর রহিমের পরীক্ষার ফল বের হলো। পরীক্ষায় এবার অংকে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে সে। একশো তে নিরানব্বই। রহিম অনেক খুশি। রহিম মৎস্যকন্যার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানালো মনে মনে।