রমজানে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জরুরি

একে তো রমজান মাস তার ওপর নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের চাপ পড়েছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এছাড়া নগরজুড়ে অবৈধ পার্কিং, মোড়ে মোড়ে অবৈধ রিকশা, অটোরিকশা এবং বাসস্ট্যান্ড, হকারদের সড়ক ও ফুটপাত দখল, স্বল্পগতির গাড়ির বেপরোয়া চলাচল তো আছেই। পদে পদে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল। শহরের মূল সড়কগুলোতে বিশ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয়। শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তার চিত্র অনেকটা অভিন্ন; চারদিকে গাড়ির জটলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাফিক আইন না মানার সংস্কৃতি শহরের রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। চালকদের অসচেতনতাও ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর পড়ে। তারা বলেন, কার আগে কে যাবে এমন একটি প্রবণতা সড়কে দেখা যায়। যানজটে এক ঘণ্টা আটকে থাকতে পারে, কিন্তু অন্য গাড়িকে এক মিনিটের জন্য সাইড দিতে পারে না। হুড়োহুড়ি করে যানজটের জটলা এমনভাবে পাকায় যে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত নিস্তার মেলে না। ওয়ান ওয়ে রোডে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, সড়কের ব্যারিয়ার না মানা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজি টেক্সির বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে পুলিশের দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, নগরের ৫০ থেকে ৬০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এরমধ্যে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করছে ট্রাফিক পুলিশ।
এসব রিকশায় অদক্ষ চালকের এলোমেলো চলাচল, আইন না মানার প্রবণতা, উল্টোপথে চলা, যেখানে-সেখানে হুটহাট রিকশা ঘোরানো, পার্কিংসহ সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। ঘটছে দূর্ঘটনা। যেন দেখার কেউ নেই। ট্রাফিক বিভাগ অনেকটা যেনতেন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
নগরের নিউ মার্কেট, কোতোয়ালি, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, চকবাজার, বাকলিয়া নতুনব্রিজ, খুলশী, বায়েজিদ, পোর্ট, আকবর শাহ, হালিশহর, পাহাড়তলি এলাকা ঘুরে প্রায় সব মূল সড়কে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে। এতে বাড়ছে জনভোগান্তি, সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। অন্যদিকে এসব রিকশা চার্জ করার জন্য নগরে কয়েক হাজার চার্জিং স্টেশন গড়ে উঠেছে। সরকারিভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চার্জিং স্টেশনের অনুমোদন না থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে চালানো হয় চার্জিং স্টেশন।
এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ‘নগরীতে ট্রাফিক জট সব জায়গায় হয়। মূলত আমাদের অবস্থান থেকে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনসংখ্যা বেড়েছে, গাড়ি বেড়েছে সে অনুযায়ী সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। পুরো নগরীতেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বেড়েছে। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে–অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে।