রমজানে পানি নিয়েও দুর্ভাবনা থাকছে

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন পানির চাহিদা ৫৬ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদন করে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার। ফলে ঘাটতি থাকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার। হালদা ও কর্ণফুলী নদী থেকে আসে উৎপাদনের ৯২ শতাংশ আর গভীর নলকূপ থেকে পাওয়া যায় ৮ শতাংশ পানি। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এক মাস ধরে নদীতে পানি কমে গেছে ফলে সরবরাহেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এখন গড়ে পাঁচ কোটি লিটার করে কম পাওয়া যাচ্ছে। এই দু কারণে ঘাটতি পৌঁছেছে ১১ কোটি লিটারে। সংস্থাটির প্রকৌশলীরা বলছেন, রোজায় পানির চাহিদা আরও অন্তত দুই কোটি লিটার বেড়ে যায়। তাহলে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াল ১৩ কোটি লিটারে।
স্বাভাবিক সময়ে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার ১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে ২৮ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে আসে ৯ কোটি লিটার। এ ছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। কর্ণফুলী পানি শোধনাগার ১ ও ২ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন তিন কোটি লিটার পানি কম আসছে। দুটি শোধনাগার থেকে পানি মিলছে গড়ে ২৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ পানি মিলছে ৪৪ থেকে ৪৫ কোটি লিটার।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে জানা গেছে, নদীর পানি কমে যাওয়া, শেওলা ও লবণের কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। তবু রোজায় সরবরাহ ঠিক রাখতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছয়টি পানিবাহী গাড়ি প্রস্তুত থাকবে। গভীর নলকূপও চালু রাখা হবে।
নগরের ওয়াসার পানির সংকটে রয়েছেন ২০ এলাকার ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ। কোনো এলাকায় দুই দিনে একবারও পানি যাচ্ছে না। কোথাও ঘণ্টাখানেকের জন্য পানি থাকছে। বলা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে পানি কমে যাওয়া ও শেওলা বাড়ার কারণে উৎপাদন কমে গেছে।
পানি সরবরাহে ওয়াসার পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি না পেয়ে অনেকেই অভিযোগ করছেন। কিন্তু ওয়াসার পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি পানিবাহী গাড়ি, চারটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ দিয়ে ভোগান্তি দূর করা যাবে না। ৪১ ওয়ার্ডের জন্য অন্তত ১৫টি গাড়ি, প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা উচিত। এ ছাড়া সংকটে থাকা এলাকা চিহ্নিত করে পানি সরবরাহের পরিকল্পনা নিতে পারত সংস্থাটি। তারা বলছে, রোজার মাসে চারটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও সাতটি দল গঠন করা হয়েছে। গভীর নলকূপগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসবের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হবে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, ওয়াসার এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। প্রতিবছর রোজাতেই এ রকম কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু দিন শেষে সরবরাহে ঘাটতি থেকে যায়।
একে তো গরম শুরু হয়েছে সে সঙ্গে চলছে রমজান মাস। এ মাসে সবকিছুরই চাহিদা বাড়ে। পানিরও বাড়ে। যেহেতু পানি ছাড়া জনজীবন অচল সেহেতু পানির জোগান সবকিছুর আগে নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প উপায়ে নাগরিকদের কাছে কীভাবে প্রয়োজনীয় পানি পৌছানো যায় সে উপায় খুঁজে বের করতে হবে ওয়াসাকে।