নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারে হোটেল কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতনের কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দায় স্বীকার করেছে আশরাফুল (১৯)।
গত সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সামনে তল্লাশি চৌঁকি বসিয়ে আশরাফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। আসামিকে আটকের পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আশরাফুলকে আটক করার পর সরল স্বীকারোক্তিতে সব তথ্য প্রকাশ করেছে। তার দেখানো জায়গা থেকে ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেক তথ্য দিয়েছে, তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এর আগে সোমবার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের আবাসিক হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সাইফুদ্দিন (৪৫) এর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যে ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা কক্সবাজার’ হিসেবে আলোচিত হয়েছিল। ঘটনার মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে পুলিশের ক্রাইমসিন টিম কাজ করে। অন্যান্য তদন্ত সংস্থাও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এ কারণে সোমবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে পালকি পরিবহন থেকে আশরাফুলকে আটক করে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।
পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বলাৎকারের ভিডিও ধারণ ও নিজের উপর যৌন নির্যাতনের ক্ষোভ থেকেই সাইফুদ্দিনকে হত্যা করে আশরাফুল।
তিনি বলেন, রোববার বিকেলে শহরের বড় বাজার থেকে দেশীয় মদ ও পেয়ারা কিনে হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন সাইফুদ্দিন ও আশরাফুল। সেখানে দেশীয় মদ পান করে একপর্যায়ে আশরাফুলকে যৌন নির্যাতন করে সাইফুদ্দিন। সেই ভিডিও নিজের মোবাইলে ধারণ করে রাখে। পরে বাইকে করে গোলদিঘির পাড়ে নামিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে চলে যেতে বলে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর আশরাফুলকে আবারও ফোন করে হোটেলে ডাকে সাইফুদ্দিন। সেখানে আবারও বলাৎকারের চেষ্টা করে। তখন নিজের উপর যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে হাত বেঁধে ফেলে। এরপর ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুলের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ভিকটিম ও ঘাতক পূর্বের পরিচিত। সে সুবাদে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে। কিন্তু মোবাইলে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করার এক পর্যায়ে ঘাতক আশরাফুল ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে সাইফুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মদ খাওয়ার পর চাদর দিয়ে মুখ চাপা দেয়, বেল্ট দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তারপর ছুরি দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সে ভিডিও ধারণকৃত মোবাইলটা আলামত নষ্টের জন্য ভেঙে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, ভেঙে ফেলা মোবাইল, ব্যবহৃত ছুরি, ভিকটিমের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। এটি প্রাথমিক স্তর। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ।
উল্লেখ্য, নিহত সাইফুদ্দিন শহরের দক্ষিণ ঘোনার পাড়ার আবুল বশরের ছেলে। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাইফুদ্দিন।
আশরাফুল কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলীর ইসলামপুর এলাকার হাসেম মাঝির ছেলে। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আশরাফুলকে শনাক্ত করা হয়েছে।