গ্রেফতার ৬, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধার #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নগরের কোতোয়ালী থানা এলাকায় গত ১৬ জুন সংঘটিত পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নগরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ওই ঘটনায় অপরাধীদের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, অস্ত্র, গুলি ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ৬ জন হলেন, কুমিল্লার মো. কামাল হোসেন (৩০), চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের মোক্তার হোসেন (২২), চাঁন্দগাওয়ের সাদ্দাম (২৬), ফটিকছড়ির শের আলী (৩২), আনোয়ারার মাসুদুর রহমান (৪০) ও সীতাকু-ের মো. এরশাদ (৩৩)।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামিরা মূলত ছদ্মবেশী ডাকাত দলের সদস্য। তারা বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সামনে ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করে। ব্যাংক থেকে আগত বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের পিছু নেয়। এ কাজে তাদের একজন সোর্স ভূমিকায় থাকেন। তার কাজ হল- টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হওয়া গ্রাহককে অনুসরণ করা।
অন্যরা তাকে (সোর্স) অনুসরণ করে ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান নেয়। সোর্সের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই অন্যরা সিএনজি বা মোটরসাইকেল যোগে টার্গেট করা গ্রাহকের পিছু নেয়। পিছু নিতে নিতে টাকা নিয়ে ওই গ্রাহক কোনো নির্জন জায়গায় চলে আসলে আসামিরা সবাই তাকে অস্ত্র বা ছোরার ভয় দেখিয়ে সব কিছু লুটে নিয়ে দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, তাদের কাজে সোর্সকে খুব পারদর্শী হতে হয়। মূলত সোর্সই নির্ধারণ করে দেয় কার কাছে টাকা আছে। তারা মূলত ব্যাংকিং সময়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামনে এলোমেলোভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। ঘটনাস্থলের আশপাশে আগে থেকেই তাদের গাড়ি ঠিক করা থাকে। এ কাজে তারা কখনো কখনো নিজেদের সাথে অস্ত্র কিংবা অত্যাধুনিক টিপ ছোরা বহন করে।
এ অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে নগরে ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্ম করে আসছিল। তারা ইশারা ইঙ্গিতে এক অপরের সাথে যোগাযোগ করে। ঘটনা ঘটানোর পর অপরাধী চক্র কিছুদিনের জন্য নীরব হয়ে নিজ নিজ বাসা বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করে। লুট করা টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেলে তারা পুনরায় একত্রিত হয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করে। এ প্রক্রিয়ায় আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে নগরে ডাকাতি করে আসছিল বলে জানান ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুন বেলা দেড়টার দিকে জামিয়াতুল ফালাহ পশ্চিম গেইট থেকে মো. ফারুক আহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে আসামিরা জোরপূর্বক পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হয়। ঘটনাটি তদন্তে গিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
মামলা দায়েরের পর তদন্তে নেমে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল এক্সিম ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখার আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিক্টিম মো. ফারুক আহাম্মদ অফিসের আশপাশে তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও ব্যাংকের আশপাশে দুজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ওইদিন বেলা ১১ টায় ভিক্টিম টাকা তুলতে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকার পর বের হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে ঘোরাঘুরি করিতে থাকে।
পরবর্তীতে ভিকটিম তার অফিস থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে গন্তব্যে যাবার পথে আসামিরা দুটি মোটরসাইকেলযোগে ভিকটিম ফারুক আহমেদকে অনুসরণ করতে থাকে। মোটরসাইকেল দুইটি ওয়াসা মোড়ে জামিয়াতুল মসজিদের গেটে ভিকটিমকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাকে ঠেক দিয়ে ফারুকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
গোপন সংবাদ এবং সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাসুদকে গত ২৬ জুন বিকালে কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে জমিউতুল ফালাহ জামে মসজিদ এলাকায় ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে একইদিন সন্ধ্যায় নগরের ওয়াসা মোড় এলাকা থেকে মাসুদের সহযোগী কামাল, মোক্তার, সাদ্দাম, এরশাদকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে একটি এলজি, ২ রাউন্ড কার্তুজ ও ৩ টি ছোরা উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় মাসুদের আরও দুই সহযোগী শের আলী ও সাহাবুদ্দিন পালিয়ে যায়। এসময় একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই ১৬ জুন ফারুকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ এলাকা থেকে টাকা ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত অপর একটি অ্যাভেঞ্জার মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। মোটরসাইকেলটি আসামি মাসুদ তার এক বন্ধুর নিকট থেকে ধার নেয় বলে স্বীকার করে। ধৃত আসামিদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে কৌশলে ফটিকছড়ি থানা এলাকা হতে মামলার পলাতক আসামি কথিত সোর্স শের আলীকে গ্রেফতার করা হয়। লুট করা ৩৫ হাজার টাকা শুক্রবার রাতে আসামি এরশাদের বাসা থেকে এবং আসামি কামালের বাসা থেকে ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।