যন্ত্রপাতি স্থাপন না করেই হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উদ্বোধন!

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক করোনায় আক্রান্ত

 

সালাহ উদ্দিন সায়েম :

আইসোলেশন শয্যা, আইসিইউ শয্যা  ও ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন না করেই তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয় নগরীর খুলশীতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য গড়ে উঠা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি। উদ্বোধনের ৬ দিন পরও হাসপাতালটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে হাসপাতালটির এক সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মান্নান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন আইসোলেশনে আছেন।

গত ২১ মে হলি ক্রিসেন্ট উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সহায়তায় গত চার বছর ধরে বন্ধ থাকা এই হাসপাতালটি সংস্কার করে করোনা চিকিৎসার জন্য চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কিন্তু উদ্বোধনের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো হাসপাতালটি চালু হয়নি। গত ২০ মে এ হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মান্নান ও ফৌজদারহাট ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিরর সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন।

হাসপাতালটি এখনো কেন চালু করা হচ্ছে না-জানতে চাইলে ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা, আইসিইউ শয্যা ও ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম এখনো পড়ে আছে। এসব সরঞ্জাম এখনো স্থাপন করা হয়নি।

তিনি বলেন, এ হাসপাতালটা চার বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। যেসব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে সব পুরনো। এখন জোড়াতালি দিয়ে এসব চালু করতে হবে। তাই সময় লাগছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলি ক্রিসেন্টকে ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল বলে প্রচার করা হলেও এর ভেতরের চিত্র ভিন্ন।

হলি ক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালা ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সুপ্রভাতকে জানান, এ হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে মাত্র ২৮টি আর ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ১১টি।

জানা গেছে, এ হাসপাতালে ২০ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ৩০ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সবাই এখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া ও হাসপাতালের যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা না করায় হলি ক্রিসেন্ট চালু করা যাচ্ছে না।

সবকিছু প্রস্তুত না করে কেন হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হলো-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর  দিতে পারেননি।

চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গত ৪ এপ্রিল নগরীর বেসরকারি ১২ টি ক্লিনিক নির্বাচন করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু ক্লিনিকগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নগরীর খুলশী জাকির হোসেন সড়কের পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে করোনার চিকিৎসার জন্য চালুর উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অর্থায়নে হাসপাতালটি সংস্কার করে গত ২৫ মার্চ প্রস্তুত করা হয়।

কিন্তু হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এই ক্লিনিকটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু এই ক্লিনিকটি পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেনারেল হাসপাতালের অধীনে একজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্লিনিকটি চালু করার নির্দেশ দেয়।