নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »
চকরিয়ায় হত্যার অভিযোগ তুলে মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে এক বছর পর সোহেল উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান এর উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়।
পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহাত উজ জামান।
এর আগে নিহত সোহেল উদ্দিনের স্ত্রী সাফিয়া জান্নাত বাদি হয়ে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৬ জনকে আসামি করে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি দরখাস্ত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নরে ৮ নম্বর ওয়ার্ড পাহাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহ আলমের মেয়ে বাদি সাফিয়া জান্নাতের সঙ্গে বিয়ে হয় চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সোসাইটি পাড়ার মৃত শামসুল আলমের ছেলে সোহেল উদ্দিনের। সংসারে তার দুই শিশুসন্তান রয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, সোহেল উদ্দিন চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথা এলাকায় হোসাইন মার্কেটে মা সার্জিকেল নামক একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরিচয়ের সূত্র ধরে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার প্রবাসী মো. নবী হোসেনের স্ত্রী কাউছার আক্তার সুমির সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল সোহেল উদ্দিনের। এই সুযোগে সোহেল উদ্দিন চকরিয়া হাই স্কুল রোড়ে সুমির ভাড়া বাসায় আসা যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে টাকা লেনদেনের বিষয়ে সুমি অপরাপর আসামিদের যোগসাজসে সোহেল উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে তিনি গুরুতর আহত হলে সুমি তার সহযোগীসহ সোহেল উদ্দিনকে স্থানীয় জমজম হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসে সোহেলকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানানো হয়, এক নারী ও কয়েকজন পুরুষ সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সমায় তারা বলেন, সোহেল স্ট্রোক করেছেন।
বাদি মামলার অভিযোগে আরো দাবি করেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ প্রভাবশালীদের ইন্ধনে মামলা নেয়নি।
এই অবস্থায় চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালতের বিচারক মো. জাহিদ হোসাইন বাদির এজাহারটি আমলে নিয়ে বিষয়টি কক্সবাজারের সিআইডি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন ।
কক্সবাজার জেলা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম মামলার বিষয়টি তদন্ত করেন। এক পর্যায়ে তিনি মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে নিহতের লাশ উত্তোলনের আবেদন করেন।
২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল আদালত আবেদন মঞ্জুর করে লাশ উত্তোলনের অনুমতি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিহতের লাশ কবর থেকে উত্তোলনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো রাহাত উজ জামানকে নিযুক্ত করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আমার উপস্থিতিতে চকরিয়া পৌরসভার মাস্টারপাড়া এলাকার কবরস্থান থেকে সোহেল উদ্দিনের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।