সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন আইন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ দাবি জানায় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন।
আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে চারটি দাবি তুলে ধরেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।
এ ছাড়াও বক্তৃতা করেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে আমরা বলছি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করছে। কিন্তু কতটুকু মালিকপক্ষ করছে কতটুকু করপোরেট কোম্পানিগুলো করছে তা দেখি না। টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো দ্বারা গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে কিন্তু আপনারা তা লেখেন না। কারণ তারা আপনাদের বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যুক্ত না।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। যতক্ষণ না এটি বন্ধ করতে পারছেন, সংশোধন না করতে পারছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দায়ের করবেন। অভিযোগ এলেই গ্রেপ্তার করে চালান দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না। জামিন পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে। সবাই বলেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা দরকার। অবশ্যই পর্যালোচনা দরকার এবং সংশোধন দরকার। এটি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না।
হাসানুল হক আরও বলেন, সরকারকে বলব অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর কথা বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে কোথায় কোথায় সংশোধন করতে সেগুলো সংশোধন করে দিন। সাইবার জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের আদালত ও আইনকানুন দরকার, সেটিও ঠিক করে বলে দিন। সুতরাং সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধানও করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার করে এটিকে গণমাধ্যমবান্ধব করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক আরও বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো দর-কষাকষি চলতে পারে না। আবার ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও কোনো রকমের দর-কষাকষি চলতে পারে না। দুটোই থাকতে হবে। ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তার বিধানও করতে হবে, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। একই সঙ্গে বাক্স্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। এই দুটো নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতে সাইবার জগতে ভূমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে সাইবার জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
সম্পাদক পরিষদের দাবির মধ্যে রয়েছে— স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, সেগুলো আইন থেকে বাদ দেয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে। যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেফতার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে।
আরো বলা হয়, যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে। সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।