গত সোমবার নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে। সেনাবাহিনী সারা দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। যাঁর দল নভেম্বরের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে, সেই দলের নেত্রী অংসান সু চিকে এবং তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীর নানামুখি তৎপরতায় সেনা শাসনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরই অং সান সু চি জনগণকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়ের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ভোটার তালিকা যাচাইÑবাছাই করার পরই আবার নির্বাচন হতে পারে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বড় জয় পেলেও সেনাবাহিনী ও সেনা সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে যেটি সু চির বিপুল বিজয়ের তুলনায় হাস্যকর। বরং এটি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করার একটি অজুহাত মাত্র। দেশটির নির্বাচন কমিশন কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করার ৪দিনের মাথায় সেনা অভ্যুত্থান ঘটলো।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দেশটিতে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এ কথা জানিয়ে তাঁর মুখপাত্র স্টিভেন দুজারিক সব পক্ষকে উস্কানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। গণতান্ত্রিক রীতি মেনে নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল পাল্টে দেবার বা গণতান্ত্রিক রূপান্তর ব্যাহত করার যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করে। চীন কোন মন্তব্য না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ১৯৬২ সাল থেকেই দেশ শাসন করছে। মাঝখানে ২০১৫ সালে বেসামরিক সরকার ফিরে এলেও প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়েনি বরং নিজেদের পছন্দমত সংবিধান প্রণয়ন করেছে, জাতীয় সংসদে এক চতুর্থাংশ আসন এবং মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদ সেনা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছে। অন্যদিকে নামকাওয়াস্তে সু চির বিরোধী একটি দল তৈরি করেছে। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর শাসনে বিভিন্ন জাতি ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলেছে। সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে সামরিক সরকারের যে কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে বিশ্বকে দেখাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ধীরে শুরু করার সম্ভাবনার কথাও তারা বলছেন। আমরা মনে করি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে যাতে বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে চাপ দেয়।
মতামত সম্পাদকীয়