কক্সবাজার ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি »
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৩ সদস্য পালিয়ে বান্দরবনে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটির বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন তারা। বিজিবির হেডকোয়ার্টার থেকে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে কত সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তা এ পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি।
পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের নিরস্ত্র করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ বর্ডার গার্ড পুলিশের আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ। এতে সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
গত শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গোলাগুলি চলছে। তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশি দুই বাড়িতে মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশসহ গুলি এসে পড়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন; ভয়ে-আতঙ্কে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকরা।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে রোববার সকাল ১০টার দিকে তারা গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা হলেন- তুমব্রু ক্যাম্প পাড়ার বাসিন্দা প্রবীর চন্দ্র ও রহিমা বেগম (৫০)। রহিমা ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদের স্ত্রী। আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার করে বান্দরবানের বাইরে নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপার থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ আসছে। তাতে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দারা। তুমব্রু এলাকার অনেকে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে সরে গেছেন।
আতঙ্কে সীমান্ত সংলগ্ন পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার কোনো শিক্ষার্থী আসেনি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির কিছু সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লাগুয়া স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্তে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে প্রশাসন থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্র সীমান্তেও উত্তেজনা চলছে।
মায়ানমারের বিদ্রোহীরা দখল করে নিয়েছে মায়ানমারের তুমব্রু ক্যাম্পটি।