রুশো মাহমুদ »
বিশৃঙ্খলভাবে আকারে বড় হচ্ছে নগর। পরিকল্পিত ও টেকসই নগর হিসেবে গড়ে ওঠেনি চট্টগ্রাম। সমস্যা সমাধানের সঠিক পরিকল্পনা না করাই এর মূল কারণ। কাগজে-কলমে অনেক কথা হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে সীমিত।
চট্টগ্রাম নগরের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একসময় চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে ৭০টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে চাক্তাই খালের দৈর্ঘ্য ৩৪ হাজার ৫০ ফুট। কিন্তু এ খালের পুরো জায়গা যত্ন করে সংরক্ষণ করতে না পারায় চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে ৩৪টি খালের সংযোগ ছিল আগে। চট্টগ্রাম ওয়াসা জরিপ করে পেয়েছে মাত্র ২২টি। মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা হচ্ছে, সংযুক্ত খালের সংখ্যা ১৮টির বেশি হবে না।
শুধু বর্ষাবাদলের দিন নয়, জোয়ার-ভাটার এই নগরে প্রখর খরতাপেও এখন অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
সরকারের সেবাদানকারী সংস্থাগুলো পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা করে, কিন্তু দুঃখজনক হলো তা বাস্তবায়ন করতে পারে না ভালোভাবে।
একটি ভালো পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন একটি শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নগরীকে ঘিরে তৈরি হওয়া মাস্টারপ্ল্যানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল মনে করা জরুরি।
একটি শহরের জন্য একটি মূল মাস্টারপ্ল্যানই হবে। এখানে একাধিক হওয়ার সুযোগ নেই। মাস্টারপ্ল্যান বলতে যা বোঝায় তা অতীতে সিডিএ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। অন্য সেবা সংস্থা প্রান্তিক পর্যায়ে পরিকল্পনা করতে পারে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মাঠে নামে, এতে মূল কাজ ব্যাহত হবে।
কোথায় শিল্প, কোথায় আবাসিক বা কোথায় বাণিজ্যিক হাব হবে, তা সিডিএর মহাপরিকল্পনায় আছে। এটি বহু বছর আগে থেকে করে আসছে সিডিএ। সিটি কর্পোরেশনসহ অন্য সেবা সংস্থা এ বিষয়ে শুধু প্রান্তিক পর্যায়ে অ্যাকশন প্ল্যান করতে পারে।
১৯৯৫ সালে সিডিএর তত্ত্বাবধানে মহাপরিকল্পনা হয়। এরপর ২৫ বছর কেটে গেছে, কিন্তু সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি নানা ব্যর্থতায়। সব সেবা সংস্থা এর জন্য কমবেশি দায়ী। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারী সিডিএকে উপেক্ষা করতে দেখা গেছে মাস্টারপ্ল্যান।
চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ২২ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। মহানগর এলাকার ভূমি ব্যবহার, আবাসন, পরিবহন, পানি নিষ্কাশন, অর্থনৈতিক কর্মকা-, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন, সামাজিক ও নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয় মাথায় রেখে সিডিএ তার পরবর্তী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ এগিয়ে নেবে। যা নগরের মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করবে।
অপরিকল্পিত এলাকাকে পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের জন্য সহায়ক কৌশল হিসেবে ভূমি পুনর্বিন্যাস ও ভূমি পুনঃউন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ রাখতে হবে এই মাস্টারপ্ল্যানে।
যতবড় মহাপরিকল্পনাই হোক না কেন তা হতে হবে অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য। নগরীর সব সেবা সংস্থাকে তা মেনে কাজ করতে হবে। থাকতে হবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা। তবেই মিলবে সুফল। নতুবা নাগরিক বিড়ম্বনা আমাদের পিছু ছাড়বে না।