শান্তিতে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পোলিওর ভ্যাক্সিনের আবিস্কারক যেভাবে এর মালিকানা ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীকে পোলিও মুক্ত করেছেন, তেমনই মালিকানা থেকে মুক্ত করতে হবে করোনার ভ্যাক্সিনকে। বাতাসের যেমন মালিকানা নেই, তেমন, যাতে সকলের লভ্য হয়ে উঠতে পারে। কেননা, মালিকানা থাকলে তাতে পুঁজি ও লাভের হিসাব জড়িত থাকে। ফলে গরিবের পক্ষে এ ভ্যাক্সিন পাওয়া সম্ভব হবে না।
আজ ১ জুলাই (বুধবার) বিকেল ৪টায় ‘পোস্ট করোনা রিকনস্ট্রাকশন প্রোগ্রাম : নো গোয়িং ব্যাক’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, করোনা পূর্ববর্তী পৃথিবীতে আমরা ফিরে যেতে চাই না। যে আত্মঘাতী পথে পৃথিবীকে আমরা পরিচালিত করেছিলাম, তাতে অচিরেই প্রাণের বিলুপ্তি হতো। আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর কথা বলছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। আমেরিকার কিশোর-কিশোরীরাও আন্দোলনে নামে ক’দিন আগেই। কিন্তু করোনা ভাইরাস এসে পৃথিবীর সেই আত্মঘাতী যাত্রাকে থামিয়ে দিলো। বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে উঠলো পৃথিবী। এ থেকে আমাদের বোধোদয় হওয়া প্রয়োজন। নতুনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নতুন এক পৃথিবীকে। সেই নতুন পৃথিবীতে বাণিজ্যিক নীতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরণ- সবকিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেবানির্ভর ও মুনাফাহীন সামাজিক ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এ জ্ঞানতাপসকে দর্শকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এসময়। করোনা পরবর্তী সময়ে ব্লেন্ডেড লার্নিং মেথড তথা ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের বহুল প্রচলন ঘটবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিভাবে পড়াবো তা পরের বিষয়, প্রথমত ঠিক করতে হবে আমরা কি পড়াবো। নিজেকে জানতে হবে। কেবল কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, বিজনেস, কম্পিউটার সম্পর্কে পড়ে লাভ নেই, যদি না আপনি নিজেকে জানেন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দর্শন-সাহিত্য গুরুত্ব সহকারে পড়াতে হবে।
আলোচনার শেষে তিনি বেশ কিছুক্ষণ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির অপর ভাইস-চেয়ারম্যান তাসমিন আরা নোমান তার শিক্ষার্থী ছিলেন। এসময় ইডিইউকে ড. ইউনূস তার পরিবারের অংশ বলে আখ্যায়িত করেন।
ইডিইউ ওয়েবিনার সিরিজে ড. ইউনুসকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান। তিনি বলেন, ইডিইউ এশিয়ার গুটিকয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি, যাদের কভিড-১৯ এর কারণে একদিনও ক্লাস বন্ধ হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রথম দিন থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি অনুসারে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করি আমরা। এর পেছনে রয়েছে আমাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী পদক্ষেপ। শুধু ক্লাস নেয়া বা ডিজিটাল লার্নিংয়ের লিডারশিপ নেয়া নয়, আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিজিটাল ডিভাইড তথা অনলাইন সুবিধা গ্রহণে সক্ষমতার তারতম্য ছিলো, তাও দূর করেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ অনলাইন ক্লাস গ্রহণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৩০ জিবি মোবাইল ডাটা বান্ডেল উপহার হিসেবে দিচ্ছি।
ইডিইউর উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনূসের সহকর্মী ছিলেন এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, বিপদের কথা সকলেই বলতে পারে, কিন্তু বিপদ থেকে মুক্তির পথ সবাই দেখাতে পারেন না। ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার জ্ঞান ও তত্ত্বে আমাদের সবসময়ই এই পথ দেখিয়ে আসছেন। পৃথিবীকে বদলে দেয়ার, মানুষ ও মানবতার মুক্তির সুবর্ণ এক সুযোগ হয়ে এসেছে আজকের ‘নতুন স্বাভাবিকতা’। আমাদেরকে তার সদ্ব্যবহার করা উচিৎ। শিক্ষালয়গুলোতে এ আদর্শের চর্চা হওয়া প্রয়োজন। ইডিইউ এক্ষেত্রে সবসময়ই সচেষ্ট।
প্রভাষক রওনক আফরোজের সঞ্চালনায় এ ওয়েবিনারটি ইডিইউর অফিসিয়াল ফেসবুক, ইউটিউব ও লিংকডইন পেইজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, এবং যা প্রায় বিশ হাজার দর্শক দেখেছেন। আগ্রহীরা যেকোন সময় ইডিইউর ফেসবুক পেইজে ওয়েবিনারটি দেখতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তি
মহানগর