সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সর্বশেষ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মানবিক কারণে ইউক্রেন প্রস্তাবে হ্যাঁ ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ মানবিক ইস্যুতে আমরা সবসময় অত্যন্ত সোচ্চার। তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে ভোট দিয়েছি। আমরা বিশ্বে মানবিক দেশ হিসেবে পরিচিত। মানবিক ইস্যুতে আমরা খুবই সোচ্চার থাকি। তাই, আমরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছি।’
শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, তিনি এখন ‘মানবতার মা’ হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ কেন সাধারণ পরিষদের উত্থাপিত আগের প্রস্তাবে (২ মার্চ) ভোটদানে বিরত ছিল জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, তখনকার প্রস্তাবটি একতরফা ছিল, যেখানে রাশিয়াকে বর্বরভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
মোমেন বলেন, ‘যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হয় না। আপনি এক হাতে তালি দিতে পারবেন না। আমরা মনে করি ওই প্রস্তাবটি খুবই পক্ষপাতমূলক ছিল এবং এই ধরনের প্রস্তাব দিয়ে যুদ্ধ থামবে না। যুদ্ধ বন্ধ করতে উভয় পক্ষকে সমান আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মানতিতস্কি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উত্থাপিত এর আগের প্রস্তাবে বাংলাদেশের ‘দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ’ মনোভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘ওই ভোটের সময় বাইরের প্রচণ্ড চাপ সত্ত্বেও নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশি পক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
একইদিন সাধারণ পরিষদের ইউক্রেনের মানবিক সঙ্কটের ওপর একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে অনুমোদিত হয়েছে। যাতে লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাড়ি, স্কুল ও হাসপাতালগুলো রক্ষার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
শুধুমাত্র ৫টি দেশ যথা-রাশিয়া, বেলারুশ, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইরিত্রিয়া সাধারণ পরিষদের উত্থাপিত এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ১৪০-৫ পক্ষে বিপক্ষ ভোটে প্রস্তাবটি পাশ হয়। রাশিয়ার মিত্র চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান ও কিউবাসহ ৩৮টি দেশ এ সময় ভোটদানে বিরত ছিল। বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ দেখতে চায় না এবং কোনো যুদ্ধের অংশ হতেও চায় না।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই শান্তিপ্রিয় দেশ। বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমরা সর্বদা যুদ্ধের বিপক্ষে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনগণের দুর্ভোগ দেখতে চায় না এবং সর্বশেষ প্রস্তাবে মানুষের মঙ্গলের কথা বলা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার এক প্রতিনিধির কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো বলপ্রয়োগ করে তাদের যুদ্ধের অংশীদার করার চেষ্টা করছে। ‘তারা আমাদের পশ্চিমের রাজনীতিতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে আরও বলেন, এতে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে আমরা যুদ্ধ চাই না এবং আমরা কোনো যুদ্ধের অংশ হতে চাই না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অংশীদারিত্ব সংলাপের পর বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর দেন, না।
কোনো দেশের চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, চাপ আছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার কোনো চাপের কাছে মাথা নত করে না।
সূত্র : ডেইলি স্টার