মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর লাশ

হত্যাকাণ্ড, সন্দেহ পরিবারের

সুপ্রভাত ডেস্ক »
নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় মাদ্রাসার পেছন থেকে যে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সে খেলতে গিয়ে পড়ে গেছে বলে পুলিশ ধারণা করলেও পরিবারের দাবি, শিশুটি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের সন্দেহ কেন- তার উত্তরে শিশুটির বাবা আব্বাস উদ্দিন বলছেন, মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নে বাধা দেওয়ায় তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে তার সন্দেহ। খবর বিডিনিউজের।
নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর পিলখানা এলাকার ডানকান হিলের ‘আলী বিন্ আবী তালিব (রঃ) মাদ্রাসার’ পেছন থেকে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থী আরমান হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
১৪ বছরের শিশুটি মাদ্রাসার দাওরা শাখার শিক্ষার্থী ছিল। আগে একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি সম্পন্ন করার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করে পরিবার।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পেয়ে সকালে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ।
শিশুটির বাবা আব্বাস মর্গের সামনে বলেন, আগামী রোজায় তারাবির নামাজ পড়াতে পারার উপযোগী করে তুলতে আরমানকে এই মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসা থেকে ফোন করে তাকে বলা হয় যে আরমানকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর সকালে আবার ফোন করে তাকে মাদ্রাসায় যেতে বলে। তিনি গিয়ে দেখেন, মাদ্রাসার উঠানে আরমানের লাশ শোয়ানো।
রোববার আরমানকে দেখতে মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন জানিয়ে আব্বাস বলেন, ওই সময় আরমান তাকে হুজুর ‘বেশি মারধর’ করে অভিযোগ করেছিল এবং হুজুর পাল্টানোর জন্য বলেছিল। তার একদিন পরই আরমানের মৃত্যু হয়।
খুনের সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার ছেলেকে ‘যৌন হয়রানি’ করার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে বাধা দেওয়ায় খুন করা হয়েছে।
আরমানের শিক্ষক মো. শোয়াইব বলেন, সোমবার মাগরিবের নামাজের পর পড়া শুরু হলে আরমানকে না পেয়ে খোঁজ নিতে তার বাসায় ফোন দিয়েছিলেন তিনি। বাসা থেকে জানানো হয় যে সে বাসায় যায়নি। পরে বিষয়টি তার মামাকেও জানান। সকাল ৭টার দিকেও আরমানের বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। তখনও আরমানের খোঁজ মেলেনি।
তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গোসল করতে গেলে পেছনে একজনকে শুয়ে থাকতে দেখে আমাদের জানায়। তখন আমাদের মাদ্রাসার এক কর্মকর্তা গিয়ে আরমানের লাশ দেখতে পায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর তারা লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
আরমানের শিক্ষক হাফেজ শোয়াইব রাতে মাদ্রাসায় থাকেন না। পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থাকেন।
যা বলছে পুলিশ
মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাদ্রাসার সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে সোমবার বিকালে আরও কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে খেলতে আরমানকেও ছাদে উঠতে দেখা গিয়েছিল। তবে নামতে দেখা যায়নি।
‘সে কারণে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনাবশত ছাদ থেকে পড়ে শিক্ষার্থীটি মারা গেছে।’
তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন বলে জানান উপ-কমিশনার মোখলেসুর।
মাদ্রাসার এই ছাদে সোমবার বিকালে খেলতে উঠেছিল আরমান হোসেন। মাদ্রাসার এই ছাদে সোমবার বিকালে খেলতে উঠেছিল আরমান হোসেন।
লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা।
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তার ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছেন। সব বিশ্লেষণ করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে সিআইডির এক কর্মকর্তা বিলেন, ভবনের ছাদটি নকশার মাধ্যমে দুই পাশ থেকে ঢালু করা হয়েছে। যার কারণে সেখান থেকে অসতর্কভাবে নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনিও বলেন, ‘লাশের অবস্থানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। কেউ ধাক্কা দিলে লাশের অবস্থান আরও দূরে থাকত।’
হাফেজ ক্বারী আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি চারতলা একটি ভবন ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। যেখানে প্রথম ও চতুর্থ তলায় মাদ্রাসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর দ্বিতীয় তলায় অফিস ও শিক্ষককদের থাকার কক্ষ। আর তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন মাদ্রাসা পরিচালক।
ভবনের কয়েক ফুটের ব্যবধানে সীমানা প্রাচীর। সীমানা প্রাচীরের ভেতরেই ছিল আরমানের লাশ।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৪০ জন শিক্ষার্থী আছে এ মাদ্রাসায়। ‘সাধারণ’ ও ‘ভিআইপি’ দুই ভাগে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। মাদ্রাসার সাধারণ শাখায় আটজন এবং ভিআইপি শাখায় চারজন শিক্ষক আছে।
মাদ্রাসার নিচ তলায় থাকে প্রায় ৯০ জন। যেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। আর আর চতুর্থ তলায় থাকে আরও প্রায় ৫০ জন। এটি ‘ভিআইপি’ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। দুই শাখার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেতনের ব্যবধানও দ্বিগুণ।
মাদ্রাসা ভবনের বাইরে খালি স্থানে শিক্ষার্থীদের গোসলের ব্যবস্থার জন্য কল লাগানো হয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, ২০০৫ সাল থেকে তিনি মাদ্রাসাটি পরিচালনা করছেন।
এটি ছাড়াও পিলখানা রেল লাইনের পাশে আলী বিন্ আবী তালিব (রঃ) আইডিয়াল মাদ্রাসা এবং অক্সিজেন এলাকায় আলী বিন্ আবী তালিব (রঃ) ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা নামে আরও দুটি মাদ্রাসা আছে তার।
তাছাড়া লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া এলাকায় আজিজিয়া এমদাদুল উলুম নামে আরও একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তিনি।
মান্নান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর আরমানের ওস্তাদ তাকে না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন। পরে বাসায় টেলিফোন করে বিষয়টি জানান। সকালে তার লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
আরমানের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের উপর জোর দেন তিনি।