মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক রিপোর্ট »

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় গত ২৫ অক্টোবর। ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর।

বাংলাদেশে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে জাপানি ঋণে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন এখন বন্ধ। কয়লা আমদানি করতে না পারায় এখান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কমিশনিংয়ের পর থেকে এর কয়লা আনা হচ্ছিল জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে। চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অপরটি একই বছরের ডিসেম্বরে চালু হয়।

যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখন পর্যন্ত জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। সেই মজুত পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। গত আগস্টে জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যায়।

তিন বছর কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে।

কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহের কাজ পেতে ঠিকাদারি বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান দুই মাস ধরে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিলম্বিত হয় কেন্দ্রটির কয়লা আমদানিসংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া।

আবার বিদ্যুৎ প্রকল্পের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ও দুর্নীতি মামলা চলমান রয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে এগুলোরও প্রভাব পড়েছে বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, কয়লা সংকটের কারণে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে বন্ধ রয়েছে, কয়লাসংক্রান্ত কোনো সংকট নেই।

সরকারের পক্ষ থেকে সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় উৎপাদনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ী প্রকল্পে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৬ হাজার ৯৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রকল্প ঋণ রয়েছে ৪৭ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৭ হাজার ২১১ কোটি টাকা। আর সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব তহবিল ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।