মাতামুহুরীর মাছ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে

পত্রিকার খবরে প্রকাশ, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর শতাধিক মাছের অভয়াশ্রম (কুম) ভরাট হয়ে গেছে। আর শীত মৌসুমে চলে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার। পলিমাটি জমে বিচরণক্ষেত্র (অভয়াশ্রম) ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছের নিরাপদ প্রজনন সক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। এতে মাতামুহুরীর মিঠাপানির মৎস্যভাণ্ডার বিপন্নের মুখে পড়েছে।মাতামুহুরী নদীর উজানে তথা আলিকদম উপজেলার নোয়াপাড়া, রোয়াম্বুর মুখ, চৈক্ষং খালের মুখ, ভরির মুখ, লেফার ফাঁড়ি, লামার উপজেলার শিলের তুয়া, ছক বিল ছড়ি, ছাগলখাইয়া, বমু খালের মুখ, সিতার কুম, মিজ্জিরির কুম ও ফাইলা পাড়া, চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর লম্বা ঘাট, ইয়াংছা খালের মুখ, ফাইতং খালের মুখ, উত্তর সুরাজপুর, ভিলেজার পাড়া, কাকারা, মাঝের ফাঁড়ি, ঘুণিয়ার কুম ও চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুসংলগ্ন এলাকা ছিল মাছের অভয়াশ্রম। এখন এসব পয়েন্টে পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে নেমে আসা পলি জমে ভরাট হয়ে মাছের বিচরণক্ষেত্র (গভীর পানির কুম) তথা অভয়াশ্রম বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২৭৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রমক্তা মাতামুহুরী নদীতে ৯৫ প্রজাতির মিঠাপানির সুস্বাদু দেশীয় মাছের অস্তিত্ব রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বান্দরবানের লামা আলীকদম অংশে ‘মাতামুহুরী নদীর মৎস্যবৈচিত্র্য’ শীর্ষক বিষয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
মাতামুহুরী নদী মৎস্যবৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নদীতে ৯৫ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ পাওয়া গেছে, যা অন্যান্য নদীর মৎস্যবৈচিত্র্যের তুলনায় বেশি। এই ৯৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৮৯ প্রজাতি দেশীয় এবং থাই সরপুঁটিসহ ছয় প্রজাতির বিদেশি মাছ রয়েছে। আইইউসিএন রেডলিস্ট অব বাংলাদেশ ২০১৫-এ থ্রেটেন্ড তালিকাভুক্ত ৬৪ প্রজাতির মাছের ২৪ প্রজাতির থ্রেটেন্ড মাছ মাতামুহুরী নদীতে রয়েছে।
আইইউসিএন তালিকার ডেটা ডেফিসিয়েন্ট তালিকার ‘বারিলিয়াস বারিলা’ (বারিলা), ‘বালিটোরা ব্রুসি’ (বালিটোরা), ‘এলিওট্রিস লিওটিয়া’ (ভূত বাইলা), ‘ওরাইজিয়াস ডানসিনা’ (কাগজি গুড়া) এ চার প্রজাতির ডেটা ডেফিসিয়েন্ট মাছের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা এ নদীতে রয়েছে।
নদীতে দেশীয় মাছের সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে নদীর তীর লাগোয়া স্থানীয় লোকজনকে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এলাকাবাসী একটু সজাগ থাকলে কেউ নদীতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করতে পারবে না। আর নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বৈচিত্র্যময় এই মৎস্যভাণ্ডার মাতামুহুরীকে রক্ষা করা যাবে না।