নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এডিস মশাকে রুখতে মশারি, কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে, লোশনসহ মশা নিরোধক নানা পণ্যের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। অনান্য সময়ের তুলনায় এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর চাহিদা বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য বিক্রি করছে কয়েকগুণ চড়া দামে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন ও নগরবাসী।
গতকাল নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, কেসিদে রোড, টেরিবাজার, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল (চমেক) ও জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিভিন্ন মার্কেট কেন্দ্রিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই স্বাভাবিক সময়ের সময়ের তুলনায় মশা নিরোধক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। অন্যদিকে মশারির পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে ও র্যাকেটের মতো নানা মশা নিরোধক সামগ্রীরও। ফলে এ পণ্যগুলোও অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেড় মাস আগে বাজারে যে মানের মশারি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যেত, তা ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। একটু উন্নত মানের মশারির দাম হাঁকাচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। আগে এই মানের মশারিগুলো পাওয়া যেত ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। আর যে মানের মশার কয়েল বক্স ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যেত তা গতকাল বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তাছাড়া ভালো মানের কয়েলের দাম নিচ্ছে ১০০ টাকারও বেশি।
এছাড়া মশা মারার স্প্রের দাম কোম্পানিগুলো না বাড়ালেও ব্যান্ডের উপর ভিত্তি করে বাড়তি নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রতি এরাসলে মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। বাজারে ২৫০ মিলিগ্রামের এরোসল স্প্রে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, ৩৫০ মিলিগ্রামের ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, ৪৭৫ মিলিগ্রামের ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে খুচরা দোকানগুলো।
এদিকে হাসপাতালগুলোকে ঘিরে রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে মশা নিরোধক সামগ্রীর দাম কয়েকগুণ বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করতে আসা রোগীর স্বজনরা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) এর সামনে মশারি কিনতে আসা মো. জাহেদ বলেন, ‘পরিবারের একজন সদস্যের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। বর্তমান তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আমাদের হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। হাসপাতালের সামনের গেইটের মশারি ব্যবসায়ীরা দাম নিচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। একটা বড় সাইজের মশারি কিনতে হলো সাড়ে ৮ শ টাকা দিয়ে, যা ২৫০ টাকার বেশি হবে না।’
পাথরঘাটা থেকে টেরিবাজারে মশারি কিনতে আসা রুমা খানম নামের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘পরিবারে মশারি সংকট রয়েছে। এতদিন মশারির প্রতি এত গুরুত্ব দেইনি। হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতেই আগাম সর্তক থাকা। তবে বিক্রেতারা বেশ দাম নিচ্ছে। অনেক দোকান ঘুরে দুইজনের একটি মশারি নিলাম ৬৫০ টাকা দিয়ে।’
এদিকে খুচরা বাজারে মশারির চড়া দাম নিলেও পাইকার ও উৎপাদকরা দাম বাড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় মাস আগে যে হারে মশারি বিক্রি হতো বর্তমান তার কয়েকগুণ বেশি বিক্রি বেড়েছে। হঠাৎ ক্রেতাদের চাপ বাড়াতেই লোকবল কম থাকায় মশারি তৈরিতে অনেকটা হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে মশারির আগের দামের সাথে উৎপাদন খরচ যোগ করা হয়েছে বলে তারা জানান।
টেরিবাজারের পাইকারি মশারি বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, গত দেড় মাস আগেও আমাদের মশারি বিক্রি তেমন ছিল না। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতেই মশারি বিক্রি বেড়েছে। তবে আমরা তেমন একটা বেশি দাম বাড়ায়নি। পাইকারিতে ভালো মানের মশারি ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে নিচ্ছি। কয়েকশো টাকা যা বেড়েছে তা মশারি উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান আকমল অ্যান্ড সন্সের মালিক জাকারিয়া বলেন, আমরা মশারির দাম বাড়ায়নি। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি পিস মশারিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। এ দাম সংযোজন করেই বিক্রি করছি। যদি খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বাড়তি নেয় তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।
অন্যদিকে ক্রেতার চাপ বাড়াতেই অনেক পাইকারি প্রতিষ্ঠান লোকবল বাড়িয়ে মশারি বিক্রি করছে ফুটপাতে।
কেসিদে রোডের পাইকারি মশারি বিক্রির প্রতিষ্ঠান জাফর অ্যান্ড সন্স মশারি বিক্রি করছেন জামালখানে। মো. আকাশ নামের তাদের এক কর্মীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মশারির চাহিদা বেড়েছে। যার ফলে ক্রেতাদের সুবিধার্থে ফুটপাতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, মশারি তৈরি করতে আগের চেয়ে লোকবল বাড়াতে হয়েছে। সে অনুযায়ী মশারি সামগ্রীর দামও বেশ চড়া যার ফলে কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।