চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ জন। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল শূন্য। কিন্তু জুন থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। তখনও একপ্রকার নীরব ছিল সিটি করপোরেশন।
জুনেই ডেঙ্গু হয়েছিল ২৮৩ জনের। মারা যান ৬ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৩১১ জন। মৃত্যু হয় ১৬ জনের। আগস্ট মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এই মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১১ জন। আর ডেঙ্গুতে মারা যান ২৮ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৫৬ জনের। এ বছর আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু হয় ৫ হাজার ৭৮৭ জনের এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারের ব্যাপকতা বেশি। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ে চটগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ ছিল হতাশাজনক। ডেঙ্গুর মাত্রা বাড়তে থাকলে ২২ জুন থেকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করে সিটি করপোরেশন।
এরপর ৯ জুলাই ড্রোনের মাধ্যমে প্রজননস্থল চিহ্নিত করে জরিমানা করার কার্যক্রম শুরু হয়। একই সঙ্গে চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও। অভিযান শুরুর পর কিছুটা হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল। ভবনের ছাদ ও এর আশপাশ পরিষ্কারে মনোযোগ দিয়েছিলেন ভবনমালিকেরা। কিন্তু সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম জোরালোভাবে পরিচালনা করেনি। বর্তমানে তো তেমন কোনো তৎপরতা চোখেই পড়ছে না।
অথচ বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, স্ত্রী এডিস মশা ডিম পাড়ে পরিষ্কার ও বদ্ধ পানিতে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি ডিম পাড়ার আদর্শ স্থান। ডাবের খোসা, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, টব, বাসাবাড়ির পানির মিটার-এ ধরনের জিনিসে বা পাত্রে পরিষ্কার পানি জমে। এসব পাত্রে পানি স্থির থাকে। নর্দমার পানি পরিষ্কার না, স্থির না। ফলে সেখানে ডিম পাড়ে না।
ডিম পাড়ার ক্ষেত্রে আরও দুটি বিষয় কাজ করে। একটি হচ্ছে, ডিম পাড়ার জায়গায় হালকা বা মৃদুমন্দ বাতাস বইতে হবে এবং তাপমাত্রা হতে হবে ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তার অর্থ হচ্ছে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মৃদুমন্দ বাতাস আছে এমন পরিবেশে পরিষ্কার ও বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে স্ত্রী এডিস মশা। নির্মাণাধীন ভবন, ভবনের মেঝে বা বড় বড় অবকাঠামোর অসংখ্য ছোট ছোট জায়গায় পানি জমে, বিশেষ করে বৃষ্টির পানি। সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা।
নগরে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। প্রজননস্থল চিহ্নিত করে জরিমানা আদায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও কার্যত বন্ধ। সিটি করপোরেশনের এমন ভূমিকার কারণে সামনের দিনে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। অনেকের প্রশ্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আসলে কাজটা কী? মশানিধনে ব্যর্থ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ, খাল উদ্ধার ও খননে ব্যর্থ, বর্জ্যব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সফলতা কোথায় তা গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ মুহূর্তের সংবাদ