রতন কুমার তুরী »
এখন শীত মৌসুম শেষ, কিছুদিন পর গরমের আবহাওয়া আসবে। সেই সাথে বাড়বে মশার উপদ্রব, নগরীর জীবনযাত্রায় এই পরিস্থিতি যে কোন সময় ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব থেকে আমরা রেহাই পাচ্ছি না আর এই ৩টি রোগের উৎস মশকের বংশবিস্তার। মশার সীমাহীন উপদ্রব এবং কামড়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে ছোট ছোট শিশুরা, শিশুদের যদি মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া কিংবা ডেঙ্গুরোগ হয়ে যায় তাহলে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। অন্যদিকে বয়স্কদের একটি অংশ যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তাদের জন্য রয়েছে ঝুঁকি। বিষয়টি বর্তমান নগরপিতাকে খুব দ্রুত চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। করোনা ভাইরাসের ভয়ে যখন মানুষ অস্থির তখন মশার যন্ত্রণা নগরবাসীদের বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। অনেককেই অদৃশ্য ভাইরাস করোনার চেয়ে দৃশ্যমান মশার কামড় বড়বেশি ভোগাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ডেঙ্গুজ্বরের আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। তাছাড়া চট্টগ্রামের সিটিতে লকডাউনের আগ পর্যন্ত পুরো এলাকায় নালা নর্দমার কাজ অব্যাহত থাকায় এবং ঠিকমতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ না হওয়ায় মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের উচিৎ হবে চট্টগ্রাম শহরের চারিদিকে মশক নিধন কর্মসূচি শুরু করা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে মশার প্রধান আবাসস্থল নালা -নর্দমা গুলোতে এই মুহূর্তে মশার ওষুধ সর্বাগ্রে ছিটানো বেশ জরুরি এসব স্থানই এখন মশার মূল আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তারপর রয়েছে বিভিন্ন ডোবা এবং কালভার্ট ইত্যাদি, এসব স্থান ছাড়াও নগরীতে মশার বংশবৃদ্ধির স্থানগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি শুরু করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। ম্যালেরিয়া অনেকটা কমে এলেও (পার্বত্য এলাকা এবং সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় এখনো আছে) মশার কারণে নতুন রোগ ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া।
ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া রোগটি মানুষদের গত কয়েক বছর ধরে। বেশ কষ্ট দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বিগত বছরগুলোতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত কয়েকজন চিকিৎসকও প্রাণ হারিয়েছেন সুতরাং সময় থাকতেই এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনে সক্রিয় তৎপরতায় নামতে হবে।
অনেক সময় আমরা লক্ষ করি নগরীতে বসবাসরত জনগণও তাদের ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে যত্রতত্র রেখে দেয়, এতে করে পরিবেশ দূষণসহ মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। শহরের জনবহুল এলাকা, বস্তি এলাকা, ডোবা, কচুরিপানা জলাশয় ভর্তি এসব স্থানে মশক নিধন অভিযান নিয়মিত রাখতে হবে। এক সময় নগরীতে সব মানুষের ঘরে বিনামূল্যে ডাস্টবিন দেয়া হয়েছিল এবং কিছুদিন উক্ত ডাস্টবিন মানুষজনদের ব্যবহার করতে দেখাও গেছে কিন্তু পরবর্তিতে উক্ত ডাস্টবিন অনেককেই বস্তাবন্দী করে ঘরের ছাদে কিংবা বাসার এক কোণায় ফেলে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত ডাস্টবিন ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে বিনামূল্যে ডাস্টবিন প্রদান কর্মসূচিটি কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা বিবেচনায় নিতে হবে। তা নাহলে এই ডাস্টবিনের কারণেই নগরীর অনেক জায়গা দূষিত হবে এবং মশার বংশ বৃদ্ধি ঘটবে।
অন্যদিকে বর্তমানে যেহেতু করোনা ভাইরাসের বিস্তার এখনও রয়ে গেছে, টিকা দেয়ার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন যদি সড়ক সমূহে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর সাথে মশক নিধনের ওষুধও ছিটায়, তাহলে দুটো কাজই একসাথে হবে, জীবাণুমুক্ত হবে এবং মশকও নিধন হবে। নগরীকে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলে মশার উপদ্রবও কমে যাবে। নগরীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা শুধু সিটি কর্পোরেশনের একার দায়িত্ব নয়, সচেতন নাগরিক হিসেবে এই দায়িত্ব নগরীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষের। আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে নগরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে মশার বংশ বৃদ্ধি কম হবে এবং রোগ বালাইও আমাাদের আক্রমণ করতে পারবে না এতে আমাদের ভবিয্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষিত থাকবে। তাই আসুন, মশার বংশ বিস্তার রোধে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি আমরাও সজাগ হই। আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক