দেশ ও বিশ্ববাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনা এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, হানাহানি সংঘাত থামাতে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জাগরণের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে শেষ দিনের মাহফিলে আলোচকরা বলেছেন, কারবালা ময়দানে ইয়াজিদি নৃশংসতার কবর রচিত হলেও এখনো দেশে দেশে ইয়াজিদি প্রেতাত্মা রয়ে গেছে। শক্তিধর দেশগুলোর প্রতাপশালী শাসকরা আজ দুর্বল ছোট্ট দেশগুলোর দিকে অস্ত্র তাক করে যুদ্ধের হুঙ্কার ছেড়ে জঘন্য বর্বরতা-নির্দয়তা দেখাচ্ছে। নিষ্ঠুর শাসকদের দম্ভ চুরমার করে দেয়া, গণবিরোধী দুঃশাসন রুখে দেয়া এবং অধিকার বঞ্চিত মজলুম মানবতার পাশে দাঁড়ানোই হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও শাহাদাতে কারবালার দর্শন ও শিক্ষা।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন মাইজভান্ডার দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন শাহসূফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী (মজিআ)।
প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। রাতে বাদে এশা দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। আলোচক ছিলেন গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানি (রা) এর আওলাদ শাহসুফি সৈয়দ আফিফ আবদুল কাদের মনসুর আল জিলানি আলবাগদাদি। তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ) মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। অন্যান্য নবী নিজেদের সন্তান সন্ততি আওলাদদের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছেন। অন্যদিকে আল্লাহ পাক কুরআন মজিদে আহলে বায়তে রাসূলের (দ) পবিত্রতা ও সুরক্ষার সুসংবাদ দিয়েছেন।
আল্লামা সৈয়দ আফিফ জিলানী বলেন, নামাজে দুরুদে আমরা প্রিয় নবী (দ) ও আওলাদে রাসুলের (দ) স্মরণ করি। তাঁদের স্মরণ ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।
এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ছোট বড় সবাইকে সালাম দেয়া, পরস্পর শান্তি কামনা করা এবং দুস্থ অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানো এসব ইসলামের নির্দেশনা। শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য, প্রিয় নবী (দ) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ) সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। খতিবে বাঙাল আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (রহ) এ মাহফিলের সূচনার মাধ্যমে সদকায়ে জারিয়া তথা প্রবহমান পুণ্যের ধারা রেখে গেছেন। এজন্য যুগে যুগে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ) ভালোবাসা ও আনুগত্যই ঈমানের দাবি। হযরত ইমাম হাসান (রা) ও হযরত ইমাম হোসাইনকে (রা) ভালোবাসা ছাড়া কখনো ঈমানদার হওয়া যাবে না।
প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দ্বীন ইসলামের মূলধারাই হচ্ছে সুন্নিয়ত। সুন্নিয়ত ব্যতীত ইসলামের ভিত্তি থাকতে পারে না। আজ বিশ্বে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর চলছে ইসরাইলি দমন নিপীড়ন ও নির্যাতন। ইসরাইল আজ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব শান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলা এই সংঘাত হানাহানি রুখে দাঁড়াতে কারবালার চেতনায় আমাদের জেগে উঠতে হবে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আল্লাহকে পেতে হলে প্রিয় নবী (দ) ও আহলে বায়তের প্রেম অন্তরে ধারণ করতে হবে। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদে লিপ্ত তারাই ইয়াজিদি মুসলমান। তাদেরকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে হবে।
কারবালা মাহফিল আয়োজনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন জমিয়তুল ফালাহর খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আলকাদেরী। তিনি হাদিস শরিফ ও ইমাম গাজ্জালির কিমিয়ায়ে সায়াদাতের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, যারা মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ। কারবালা পরবর্তী পাপিষ্ট ইয়াজিদের অপকর্ম বিষয়ে আলোচনায় করেন অধ্যক্ষ আল্লামা ড. এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, শুধু দাড়ি টুপির নাম ইসলাম নয়। ইয়াজিদের তাঁবুতেও ওই পাপিষ্টরা নামাজ পড়েছে। কিন্তু তাদের নামাজে আহলে বায়তে রাসুলের (দ) স্মরণ না থাকায় এ নামাজ আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আজকের নব্য ইয়াজিদিদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
ধন্যবাদ বক্তব্য দেন মাহফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ। তিনি বলেন, আমরা জোরপূর্বক কোনো কিছুই দখল করি না। মানুষের মন জয়ী করেই এই মাহফিল জারি রেখেছি। তিনি সমবেত জনতা ও অতিথি-আলোচকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। মাহফিল সঞ্চালনায় ছিলেন ড. মাওলানা জাফর উল্লাহ।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরীর (রহ) সন্তান ব্যারিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম ও আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা আবু তৈয়ব মুহাম্মদ লেয়াকত আলী, বিজিএমএ এর সাবেক সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। বিজ্ঞপ্তি