নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘড়িতে তখন সকাল আটটা বেজে ১০ মিনিট। মুখ গোমরা করে এক আত্মীয়ের হাত ধরে স্কুলে এসেছে সাত বছরের প্রাপ্তি দাশ গুপ্তা শ্রীপূর্ণা। করোনা টিকা নিতে স্কুলে এসেছে সে। সে চিটাগং গ্রামার স্কুলের কেজি টুয়ের ছাত্রী। তারও আগে বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী সবাই নীল রংয়ের টি-শার্ট, নেভী ব্লু প্যান্ট, সাদা জুতো, মুখে মাস্ক পরে অভিভাবকের সাথে বসে আছে টিকা নিতে। অন্যদিকে শিক্ষকরাও টিকাদান কর্মসূচিতে বাচ্চাদের সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এর ঠিক ২০ মিনিট পর টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে এক ছাত্রীর নাম ডাকা হলে বাবার হাত ধরে সে টিকা দেওয়ার আসনে বসে পড়ে। দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মী যখনই ইনজেকশন বের করলেন তখনই কেঁেদ উঠলেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় বাবা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে এবং শিক্ষক-সহপাঠীরা সাহস জোগাচ্ছিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর টিকা দেওয়ার পর্বও শেষ হলো। এভাবে একে একে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্য শিক্ষার্থীরা বেশ নির্ভয়েই টিকা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলো না কোনো ভয়।
কয়েকদিন ধরে টিকা নেওয়া কারো কোনো উপর্সগ দেখা দিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে চিটাগং গ্রামার স্কুলের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা হামিদা খান মুণি বলেন, আমাদের স্কুলে ২৫ আগস্ট থেকে ৫ থেকে ১১ বছরের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারোর মধ্যে সাংঘাতিক উপসর্গ দেখা যায়নি। তবে কিছু শিক্ষার্থীদের সামান্য জ্বর এবং কাঁধে ব্যাথা দেখা গিয়েছে। বিশ্রামের পর সে ব্যাথাও সেরেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী লাইন ধরে একে একে টিকা নিচ্ছে। দুয়েক জন বাদে কারোই মা বাবাই সাথে নেই। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত। টিকা দিতে ভয় করছে কিনা জিজ্ঞেস করলে সজোরে সবাই চিৎকার করে বলে উঠে ‘না ভয় করছে না’।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজাদ ইকবাল পারভেজ জানান, আমরা প্রথমে প্রত্যেক শ্রেণিক্ষকে টিকাদানের গুরুত্ব সর্ম্পকে শিক্ষার্থীদের অবহিত করি। ভয় তাড়াতে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিই। সেটাই দারুণভাবে কাজে লেগেছে, ফলে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে টিকা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে। শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিয়ে উপসর্গ দেখা দিয়েছে, আজ পর্যন্ত এমন অভিযোগ জমা পড়েনি।
টিকার উপসর্গ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আওতায় টিকা দেওয়ার তথ্যগুলো এখন আমাদের না থাকায় বলতে পারছি না। বাকিগুলোতে শিশুদের জ্বর বা অন্যান্য সাইড ইফেক্ট হয়েছে এমন তথ্য আমরা এখনো পায়নি। টিকা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ দিন, আরও দুয়েক দিন পর আমরা এ ব্যাপারে পরিষ্কার বলতে পারবো।
গত চারদিনে মোট কত শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চসিকের আওতাধীন রির্পোটগুলো হাতে না পাওয়ায় সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারছি না। আজ (গতকাল) রিপোর্ট পেলে সোমবার সকালে আমরা বলতে পারবো। তবে উদ্বোধনের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২দিনে আমরা প্রায় ১৭ হাজারের অধিক শিশুকে টিকা প্রদান করেছি।
উল্লেখ্য, ২৪ আগস্ট (বুধবার) নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এ কার্যক্রম। উদ্বোধন করেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নগরীতে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে ফাইজারের তৈরি এ বিশেষ টিকা দেওয়া হচ্ছে। ১৪ দিনের এ কার্যক্রমে টিকা দেওয়া হবে ৪ লাখের বেশি শিশুকে। প্রথম ১২ দিন বিভিন্ন স্কুলে ও বাকি দুদিন কমিউনিটি পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে ১৬৪টি টিম টিকা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।