ঈদে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে #
ভূঁইয়া নজরুল :
নগরীর দামপাড়ায় ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর পুলিশ পাহারা এবং প্রশাসনের নজরদারি ছিল। শুধু দামপাড়ায় নয়, পাহাড়তলী ও সাগরিকায় যখন দ্রুত করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল তখন আক্রান্ত বাড়িগুলো ছিল পুলিশ প্রহরায়। ফলে পাশ্ববর্তী এলাকায় সেভাবে ছড়াতে পারেনি। এচিত্র পুরো নগরজুড়েই ছিল। কিন্তু এখন আর সেই আক্রান্ত বাড়িতে নেই পুলিশ প্রহারা, রাস্তায় মানুষ অবাধে চলাচল করছে, যানবাহনও চলছে দেদারছে। মানুষের মধ্যে যেন করোনার ভয় আর নেই! এতে করে বাড়ছে করেনো রোগী। কঠোর লকডাউন ছাড়া এর বিস্তার থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। অন্যথায় আসন্ন ঈদে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।
এবিষয়ে পাহাড়তলী থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় যখন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল তখন দামপাড়া থেকে বাড়তি পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাড়িটি পাহারায় রাখতাম। প্রথম দিকে প্রায় একমাস এভাবে আক্রান্ত বাড়িগুলোতে লকডাউন মেনে চলা হতো।
কিন্তু একমাস পর বন্ধ করা হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দামপাড়া থেকে অতিরিক্ত ফোর্স দেয়া হচ্ছিল না। তাই তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
একইকথা বলেন আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত বাড়ি পাহারা দেয়ার মতো ফোর্স আমাদের নেই। তাই তা সম্ভব হচ্ছে না।
এবিষয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে আমরা যেভাবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে এবং প্রশাসনকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকা দিতাম এখনো দিয়ে আসছি। কিন্তু তারা কেন আক্রান্ত বাড়ি লকডাউনের আওতায় আনছে না তা আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন আনিনি।
তবে করোনা সংক্রমণ বিস্তার কিন্তু শুধু বাড়ি বাড়ি পাহারা বন্ধ করে দেয়ার কারণে বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মানুষ রাস্তাঘাটে অবাধে চলাচল করছে। মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে কোনো ভয় নেই। আমরা যে করোনা যুগে বাস করছি এটা মানুষ ভুলে যাচ্ছে। সামনে ঈদে আমাদের জন্য আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
ডা. শাহরিয়ার বলেন, বড় গাড়ি চলাচল করছে না ঠিক। কিন্তু ছোটো গাড়ি দিয়ে মানুষ অবাধে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এতে আগামী ঈদে আমাদের জন্য ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। প্রশাসন থেকে যদি এক জেলা বা এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় চলাচল বন্ধ করতে পারতো তাহলেও কিছুটা সুফল পাওয়া যেতো।
তবে শুধু ছোটো গাড়ি নয়, রাস্তায় গার্মেন্টসকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করে, আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো অলংকার ও একেখান মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। রোববার দুপুরে দেখা যায়, অলংকার মোড়ে কাভার্ডভ্যানে চালকের পাশের সিটে যাত্রী তুলে নেয়া হচ্ছে। রাস্তার পাশের অনেক দোকানপাটও চালু রয়েছে।
কিন্তু পুলিশ ফোর্স বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ‘আমাদের অনেক পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত ঠেকাতে এর বিকল্প ছিল না। তবে এটা সঠিক যে, আমরা যখন লকডাউন পুরোপুরিভাবে মেইনটেইন করেছি তখন সেভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। লকডাউন শিথিলতার পর থেকেই বাড়ছে করোনা রোগী।
একই বক্তব্য চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বীরও। তিনি বলেন, মানুষ যে হারে অবাধে চলাচল করছে এখন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবেই। পুরো মে মাসজুড়ে বাড়বে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
উল্লেখ্য, প্রথমদিকে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা সতর্কতা থাকলেও এখন যেনো কোনো বিষয় নয়। দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মানুষের মধ্যে ভয় নেই। তারা যেনো আরো বেশি করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং চলাচল করছে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা চালুর অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে মূলত বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে রোববার থেকে মেট্রোপলিটন পুলিশ আদেশ দিয়েছে এখন থেকে আর চট্টগ্রাম শহর থেকে বের ও বাহির হওয়া যাবে না। তা কড়াকড়ি করা হবে এবং এক্ষেত্রে পুলিশের অনুমোদন নিতে হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৭১৮ জন করোনায় আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে মারা গেছে ৩৫ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ১০২ জন।