ভোজ্যতেলের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান দরকার

দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, বাজারে যেসব ভোজ্যতেল আছে সেগুলো খুব মানসম্মত নয়। অনেকে মনে করেন বর্তমানে নানাবিধ রোগের কারণ বাজারে প্রচলিত ভোজ্যতেল। ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় ‘খোলা ভোজ্যতেল, সুস্বাস্থ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও জাতীয় একটি দৈনিক যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে মূলত খোলা তেল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি, বাজার ব্যবস্থাপনা এবং করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, দেশে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোজ্যতেল খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়। এই খোলা তেল পরিবহন ও সংরক্ষণে রাসায়নিকের ড্রাম ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তাই প্যাকেটজাত ভোজ্যতেলের ব্যবহার বাড়ানো এবং মান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, দেশে আমদানি বেশি হয় পাম অয়েল। কিন্তু খুচরা বাজারে গেলে দেখা যায় সয়াবিন তেল বেশি। এখানেই শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। ভোজ্যতেলের মান নিয়ন্ত্রণে সরবরাহশৃঙ্খল শনাক্তকরণের (ট্রেসিবিলিটি) ওপর জোর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, হয় খোলা তেল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, নয়তো এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ট্রেসিবিলিটি নিশ্চিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, সিলেট, কুমিল্লাসহ অনেক জায়গায় তিনি দেখেছেন, যেসব কনটেইনারে তেল রাখা হয়েছে, সেগুলো কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সেই সঙ্গে যারা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তারাও কেউ সচেতন নয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে সবাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে প্যাকেটজাত তেল ব্যবহারের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। শিল্পকারখানায়, বাণিজ্যিকভাবে খোলা ভোজ্যতেল ব্যবহৃত হচ্ছে। দামে কম এবং বাজারে ছোট প্যাকেজিং না থাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষও খোলা তেল ব্যবহার করছেন। এসব তেল সংরক্ষণ করা হয় রাসায়নিক পরিবহনে ব্যবহৃত পুরোনো ড্রাম। ফলে রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ ভোজ্যতেলের সঙ্গে মিশে দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, খোলা তেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ না থাকায় এখনো দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বড় অংশের মধ্যেই ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি থেকে গেছে।
রাসায়নিকের ড্রামে ভোজ্যতেল সংরক্ষণ বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ। তিনি বলেন, সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে যেভাবে লবণে আয়োডিন যুক্ত করে আয়োডিনের ঘাটতি দূর করা গেছে, তেমনিভাবে ড্রামে ভোজ্যতেল পরিবহন ও সংরক্ষণও বন্ধ করতে হবে।
খোলা বাজার ভোজ্যতেল বিক্রির ওপর কড়াকড়ি থাকলেও তা মানছে না কেউ। ফলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন। তাছাড়া বোতলজাত তেলও যথাযথভাবে পরিশুদ্ধ করা হয় কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে জনমনে। কাজেই সরকারকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে ভোজ্যতেলের মান নিয়ন্ত্রণে।