ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাধা কোথায়

আবারও বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। বাজারে শাক-সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি এক শ টাকার ওপরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালের দাম। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি এক থেকে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
কোনো কারণ ছাড়াই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি দুই থেকে আড়াই শ টাকা পর্যন্ত। চালের সবচেয়ে বড় ও ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মিল মালিকদের দাবি, ধান সংকট ও ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের কাছে ৯ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৮ টন চাল মজুদ রয়েছে। গম মজুদ আছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৭৫৬ লাখ টন।’ সে সঙ্গে বর্তমান অবস্থায় চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত শনিবার আমাদের জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধির কারণ খোঁজা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। যাতে বাজারদর স্থিতিশীল থাকে। যেক্ষেত্রে জেলাপর্যায়ে সমাধান করা যাবে না, সেক্ষেত্রে অধিদপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘বাজারে ধান-চালের সংকটের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মিলার ও বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।’
একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধান কাটার পর থেকেই বিক্রি শুরু হয়। অনেকে ক্ষেত থেকেই ধান বিক্রি করে দেন। এসব ধান ফড়িয়া হয়ে করপোরেট গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। সব না হলেও বেশিরভাগ ধানই এর মধ্যে করপোরেট গোষ্ঠীর গুদামে উঠেছে। তারা ইচ্ছা অনুযায়ী দাম বাড়ায়, আবার ইচ্ছা হলে কমিয়ে থাকে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে মতে এবার উৎপাদন বেশি হয়েছে। তাদের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২২ দশমিক ৬৬৪ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ২২৩ দশমিক ৯৪৮ লাখ টন। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে ১ দশমিক ২৮৪ লাখ টন।
অর্থাৎ দাম বাড়ার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। কারো ইচ্ছে হয়েছে তাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, বিষয়টি অনেকটা এমন।
এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা কী? সাধারণ মানুষ আর কতকাল মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর ইচ্ছা বা লালসার বলি হবে? আর কত অসহনীয় হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বা প্রশাসন তৎপর হবে?