ভোগ্যপণ্যে ভরপুর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

রমজানে দাম বাড়ার শঙ্কা নেই

রুমন ভট্টাচার্য
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস আসলেই নানা কারণে হু হু করে বাড়তে থাকে ভোগ্যপণ্যের দাম। তৎপর হয়ে উঠে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর মাত্র ক’দিন পরেই শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এবার রমজানকে ঘিরে ব্যাপক ভোগপণ্য আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা ভোগপণ্যে ভরপুর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ইতোমধ্যে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ হয়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য পৌঁছে গেছে সারাদেশে।
আমাদানিককারকদের তথ্য মতে, এবার চিনি, ছোলা, খেঁজুর, মসুরডাল আরো বেশ কয়েকটি পণ্য বিপুল পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। যা গত দুই বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। তাই দাম বাড়বে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের পাইকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে ঘিরে ভোগপণ্যে সয়লাব বাজার। প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই। এছাড়া বিশ্ববাজারেও ভোগপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারিতে ১৩ হাজার ২২৯ টন, ফেব্রুয়ারিতে ১৪ হাজার ৭৪৬ টন ও মার্চে ১৫ হাজার ৮৬০টন খেজুর আসে। চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত বন্দর জেটিতে মোট ৪৬ হাজার ৩৯ টন চিনি ও ২১ হাজার ৩২ টন ছোলা খালাস হয়।
খেজুর আমদানি করা হয় সৌদি আরব, ইরাক, আরব আমিরাত ও মিশর থেকে। ছোলা আমদানি করা হয় অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, রাশিয়া ও কানাডা থেকে। এছাড়া মসুর ডাল আমদানি করা হয় চীন, মিশর, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও কানাডা থেকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি নির্ভর পণ্যগুলো বিশ্ববাজারে দাম উঠা-নামার উপর নির্ভর করে।
এদিকে, গতকাল খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ান ছোলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকায়। মসুর ডাল (মোটা) ৭৫ টাকা ও চিকন ১১২ টাকা। বোলতজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৩০ টাকা, ৫লিটার ৬৫ টাকা ও সয়াবিন খোলা প্রতিকেজি ১৩০ টাকা। খেজুর মানভেদে ১০০ থেকে ৬৫ টাকা। চিড়া দেশি ৫৫ টাকা, ভারত ৬৫ টাকা, মুড়ি সাদা ৭০ টাকা ও লাল মুড়ি ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, মহানগরীর ৩৫টি স্পটে ট্রাকে করে ভোগপণ্য বিক্রি করছেন বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ টিসিবি। ট্রাকে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১০০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২০ টাকা, ছোলা প্রতিকেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দু’একদিন পর খেজুরও বিক্রি করা হবে বলে জানা গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ী বলছেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এখন রমজানের ভোগপণ্যে ভরপুর। দামও মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ পাইকারিতে বাড়লে খুচরায় দাম বাড়ে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ প্রচুর। কোনো সংকট নেই। বন্দরে আরো খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। পাইকারিতে প্রতিদিনই দাম পড়ছে। তাই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে আমদানি নির্ভর ভোগপণ্যগুলো বিশ্ববাজারে দাম উঠা-নামার ওপর নির্ভর থাকে। সেখানে বাড়লে এখানেও বাড়বে।
‘বর্তমানে ব্যাংকিং সময় কম হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাংক থেকে কাগজপত্র নিয়ে বন্দরে যেতে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই সময় বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। বন্দরে পণ্যের খালাস প্রক্রিয়া যদি ঠিক থাকে তাহলে বাজারে তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের দাম যেটা বাড়ার সেটা আগেই বেড়ে গেছে। বাজারে কোনো মনিটরিং নেই। বাজার এখন তার আপনগতিতে চলছে। অনেক মানুষের কেনাকাটাও হয়ে গেছে। এছাড়া লকডাউন ঘোষণার পর অনেকে পণ্য মজুদ করে ফেলেছেন। এখন বাজারে ক্রেতা কম। তাই ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়তে না চাইলে দাম ছেড়ে দেবে। এছাড়া টিসিবির পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকলে বাজারে চাপ বাড়বে না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী-পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাজার সরবরাহ ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে। লকডাউনের প্রথম দিন চাহিদা বাড়ায় কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ১-৩ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। এখন সেসব পণ্য আবার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। চিনি, ছোলা, সয়াবিন তেল, মসুর ডালের দাম আরো কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে টিসিবির ৩৫টি ট্রাকে তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজ বিক্রয় কার্যক্রম পুরো রমজানজুড়ে অব্যাহত থাকবে।’