ফজলুররহমান বাবুল :
মানুষের যৌথ জীবনযাত্রায় ভাষার তাৎপর্য অনেক। বাক্শক্তিহীন মানুষের দৈনন্দিন জীবন স্থবির, কঠিন। ভাষা কী, এমন প্রশ্রও ভাষা ছাড়া হয় না। কোনও বিষয়ের সংজ্ঞা দিতে ভাষার প্রয়োজন হয়। ভাষার সংজ্ঞাটিও ভাষা ছাড়া দেওয়া যায় না। ভাষা ছাড়া একজন আরও-একজনকে (কোনও-একটি রীতির ভিতরে) জানাতে পারেন না-যে-অর্থবহ ধ্বনির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় তা-ই ভাষা। ভাষার সাহায্যে ভাবপ্রকাশের এই আলাদা ক্ষমতার জন্য মানুষ অন্য সকল জীব থেকে এক আলাদা বৈশিষ্ট্যে উন্নীত হয়েছে। মানুষের চিন্তার প্রকাশ হয় যে ভাষার আবরণে সেই ভাষার ক্ষুদ্রতম এককÑ ধ্বনি। ধ্বনি ছাড়াও মানবসমাজে আরও একধরনের ভাষা ব্যবহারের প্রচলন আছে, তা হল ভঙ্গিভাষা। আধুনিক মানুষের ধারণা, ভঙ্গিভাষা মানবসমাজের আদিভাষা। আদিম মানুষ ভঙ্গি ব্যবহারে অনেক দক্ষ ছিল বোধ করি। হাল-আমলে মানবসমাজে ভঙ্গিভাষার ব্যবহার অতি সীমিত। অর্থবহ ধ্বনি উচ্চারণের জন্য মানুষ বাগ্যন্ত্রকে ব্যবহার করতে শুরু করার পর থেকে ভঙ্গিভাষার ব্যবহার কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্য-কোনও জীব মানুষের মতো (অর্থবহ) ধ্বনি সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীতে অর্থবহ ভাষা ব্যবহারের কৃতিত্বটা মানুষেরই দখলে। ভাষা মানুষের স্বোপার্জিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। মানুষ কর্তৃক ভাষা অর্জনের ক্রমধারাটিকে চিহ্নিত করা হয় যে-রকম : অঙ্গভঙ্গি/ ইশারা-ইঙ্গিত Ⴎ অর্ধহীন ধ্বনি Ⴎ ধ্বনিগুচ্ছ বা শৃঙ্খলহীন বাক্য Ⴎ শৃঙ্খলাবদ্ধ শব্দসমষ্টি বা সঠিক বাক্য।
পৃথিবীতে আলাদা-আলাদা ভাষিক সমাজ বা গোষ্ঠীভিত্তিক ভাষা বিদ্যমান। নানান জাতির নানান ভাষা আছে। জন্মগতভাবে অর্থবহ ভাষা নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসেনি, আসবেও না। মানুষ ভাষা আয়ত্ত করে। অর্থবহ ভাষার জন্য মানুষের রয়েছে নিরন্তর অনুসৃতি ও অধ্যবসায়। অনুসৃতি ও অধ্যবসায়ের ভিতরেই মানবজাতির ভাষা বিকশিত ও উন্নত হয়েছে। মানবভাষার বিকাশ ও উন্নতির পেছনে নিরন্তর ভূমিকা রেখেছে মানুষেরই প্রয়োজন।
পরিস্থিতি অনুসারে (সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতার আলোকে) মানুষের অন্তরিন্দ্রিয়েই ভাষার উদ্বোধন হয়। মানুষ তার জীবনযাপনের নানা ক্ষেত্রে নানা প্রয়োজনেই ভাষা সৃষ্টি করেছে- এরকম সরল সিদ্ধান্তের আলোকেই ভাষার উদ্ভবসংক্রান্ত সকল রহস্যের সুরাহাও করা যায় না, আবার একবাক্যে অস্বীকার করার যৌক্তিকতাও থাকে না; যেহেতু মানুষের আদিম অবস্থায় জীবনযাপন, পরিবার, সমাজ, যোগাযোগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে আধুনিক মানুষ আজও পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়নি। নানান কারণে ভাষারহস্যের অনেক-কিছু আজও অনুমানসিদ্ধ। ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞানলাভে গবেষক ও ভাষাতাত্ত্বিকদের সামনে নানান সীমাবদ্ধতা বা ধোঁয়াশা আছে; আছে নানান মত বা মতবাদ। ভেেৈগালিক অবস্থান, জাতি-ধর্মভেদে ভাষার উদ্ভববিষয়ে সংস্কারও কম নয়। জৈন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, মানুষসহ সকল জীবজন্তুর মূলভাষা অর্ধমাগধী। সংস্কৃত ভাষা দেবভাষা হিশেবে হিন্দুদের মধ্যে বিশ্বাস যেমন প্রচলিত রয়েছে তেমনই মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস আরবি আল্লাহর ভাষা এবং বেহেশতে সকলের ভাষাও হবে আরবি-যেহেতু কোরান শরিফের ভাষা আরবি। বৌদ্ধদের প্রচলিত বিশ্বাস, মূলভাষা হল পালি; অনেক ইহুদি এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টানের মতে হিব্রু ভাষাই মানবসমাজের প্রথম ভাষা।
আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলি। বাংলায় আমি কোনও-একটি ছবি আঁকতে পারি কিংবা গাইতে পারি গান। আমার দেশের সংবিধান আমার মাতৃভাষা বাংলায় রচিত। বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা আমার রাষ্ট্রভাষা। মাতৃভাষায় যে-কোনও মানুষের আপনসত্তা প্রতিনিয়ত স্বপ্নের ঘুড়ি ওড়ায় কিংবা গান গায়। মাতৃভাষায় মানুষের হৃদয়ে ফুল ফোটে, পাখি গান গায়।
মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের হৃদয় বাঁধা থাকে অলৌকিক সুতায়। মাতৃভাষার সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন ছিন্ন করা কি খুব সহজ? যে-মানুষ খুব সহজে হৃদয় থেকে মাতৃভাষার মমতাকে অপসারণ করতে পারে সে নিশ্চয় কোনও জাদুকর। মাতৃভাষার মতো অন্য-কোনও ভাষা মানুষের হৃৎপি-ে শিরায়, রক্তে কম্পন তৈরি করতে পারে না। একজন কবি মাতৃভাষা ছাড়া তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখতে পারেন না।
পৃথিবীতে আরও অনেক ভাষার মতো আমার মাতৃভাষা বাংলার লেখ্যরূপ ছাড়া রয়েছে নানান আঞ্চলিক বা মৌখিক রূপ। বাংলাদেশের সিলেট জেলাধীন বিশ্বনাথ অঞ্চলের বাংলাই আমার মৌখিক ভাষা বা আটপৌরে ভাষা। মানুষ যেভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে কোনও কোনও সম্পত্তি লাভ করে-সেভাবে এই আঞ্চালিক বাংলায় কথা বলার দক্ষতা অর্জন করিনি আমি। জন্মের পর (শিশুকালে) আমার মা-বাবা এবং আমার পরিবারের অন্য লোকজনের নিকট থেকেই ভাষা আয়ত্তের প্রথম পাঠ গ্রহণ করেছিলাম আর আমার পরিবারের এবং আমার অঞ্চলের ভাষাগত প্রতিবেশে বেড়ে উঠতে-উঠতে ক্রমশ আয়ত্ত করেছি এই ভাষা, এই আঞ্চলিক স্বরভঙ্গি এবং শব্দাবলি। সিলেট জেলাধীন বিশ্বনাথ অঞ্চলের মানুষের কথ্যভাষা আমার মাতৃভাষা বাংলারই একটি অঞ্চলিক রূপ।
আমার জীবন এবং সমাজের সঙ্গে আমার মাতৃভাষার সম্পর্ক গভীর, নিরন্তর। আমার চিন্তাভাবনাগুলো মাতৃভাষার সরোবরেই প্রতিনিয়ত সাঁতার কাটে। আমার মাতৃভাষা আমার চিন্তার ভাষা, স্বপ্নের ভাষা। স্বপ্নে কথা বলতে হলে আমি মাতৃভাষায় বলি। আমি যদি কল্পনা করি মানুষের কোনও ভাষা নেই, তাহলে আমার অনুভবে আসে আমার জীবনেও অনেক-কিছুর কোনও অস্তিত্ব নেই। ভাষাহীন মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারলেও তার পক্ষে অনেক বিচিত্র কাজই করা সম্ভব নয়। ভাষাহীন মানুষ এত সহজে বোঝাতে পারে না ‘সবার উপরে মানুষ সত্য/ তাহার উপরে নাই।’ এই রচনায় আমি যা বোঝাতে চাইছি তা ঠিক এভাবে ভাষা ছাড়া সম্ভব ছিল না। ভাষা ছাড়া মানুষের পক্ষে আরও অনেক-কিছুর মতো সংগীত, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি রচনাও সম্ভব ছিল না; সম্ভব ছিল না বাংলাদেশসহ অন্য কোনও রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান রচনা করা।
জীবনের নানান বাঁকে ভাষার নানান প্রকৃতি আছে, প্রতীকী গুণ আছে। মানবজীবনে ভাষা সৌন্দর্যের, ভাষা আনন্দ-বেদনার, ভাষা সুস্থতা ও অসুস্থতার। ভাষা ভাবের, ভাষা জ্ঞানের। ভাষা ঐক্যের কিংবা ঐক্যহীনতার। ভাষা ¯িœগ্ধ, ভাষা কর্কশ। ভাষায় লাভ, ভাষায় লোকসান। সবক্ষেত্রেই কি আমরা ভাষার সৌন্দর্য, শক্তি-সামর্থ্য কিংবা ভূমিকাটুকু উপলব্ধি করতে পারি? শুধু বাংলা ভাষারই নয়-যে-কোনও ভাষার সৌন্দর্য, স্বাদ, স্থানভেদে বা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
অজানা অতীত থেকে যুগ-যুগান্তর পেরিয়ে ভাষার চাকা অজস্র ধারায় পথ চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। ভাষার আঁকাবাঁকা চলার পথে আছে বিস্তর ভাঙাগড়া; বহু রঙে ভাঙাগড়ার বিস্তার বহুদিকে।
মানুষ ভাষার রূপ-রং ও পথ বদলে দেয়, কিন্তু ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করতে পারে না। পথ, রূপ, রং বদলালেও পৃথিবীতে কোনও-না-কোনও ভাষা ততদিনই মানবজীবনে সংযুক্ত থাকবে যতদিন মানুষ থাকবে। কোনও-না-কোনও পথে, রঙে মানুষকে কোনও-না-কোনও ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাবের আদানপ্রদান/ যোগাযোগ, শিক্ষণ, প্রশিক্ষণসহ বিচিত্র প্রয়োজনে ভাষার দরকার। কোনও ভাষাকে কোনও মানুষ একা-একা সৃষ্টি করেনি। ভাষার উদ্ভব বিষয়ে নানান সময়ে নানান ধারণাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে, নানান রহস্যের স্পষ্ট সুরাহা আজও হয়নি।
ভাষার সাহায্যে মানুষ চিন্তা/ ভাব যেভাবে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে পারে কিংবা কোনও তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে, সেরকম কি আর কোনও উপায়ে সম্ভব? দৃষ্টিশক্তির সাহায্যে একজন মানুষ আরও-একজন মানুষকে বাহ্যিকভাবেই দেখে; দেখে চোখের সামনে একজন মানুষ এবং ওই মানুষটির আকৃতি-অঙ্গভঙ্গি কিংবা চলাফেরা, কিন্তু ওই দেখার যোগাযোগের বা আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে অনেক অসম্পূর্ণতাকে দূর করতে পারে ভাষা; তা হোক মৌখিক বা লিখিত ভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলাভাষা-পরিচয়’ নামের বইয়ে লিখেছেন, ‘মানুষ যেমন জানাবার জিনিস ভাষা দিয়ে জানায়, তেমনি তাকে জানাতে হয় সুখ-দুঃখ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, নিন্দা ও প্রশংসার সংবাদ। ভাবে-ভঙ্গীতে, ভাষাহীন আওয়াজে, চাহনিতে, হাসিতে, চোখের জলে এই-সব অনুভূতির অনেকখানি বোঝানো যেতে পারে। এগুলি হল মানুষের প্রকৃতিদত্ত বোবার ভাষা, এ ভাষায় মানুষের ভাবপ্রকাশ প্রত্যক্ষ। কিন্তু সুখ-দুঃখ ভালোবাসার বোধ অনেক সূক্ষ্মে যায়, ঊর্ধ্বে যায়; তখন তাকে ইশারায় আনা যায় না, বর্ণনায় পাওয়া যায় না, কেবল ভাষার নৈপুণ্যে যতদূর সম্ভব নানা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ভাষা হৃদয়বোধের গভীরে নিয়ে যেতে পেরেছে বলেই মানুষের হৃদয়াবেগের উপলব্ধি উৎকর্ষ লাভ করেছে।’
আমরা আজও নিশ্চিত জানি না, ঠিক কোন সময় থেকে আদিম মানুষ চিন্তা/ ভাব প্রকাশের জন্য, একটা-কিছু বোঝা কিংবা বোঝানোর জন্য অঙ্গভঙ্গি/ সংকেত কিংবা যৌক্তিক ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। জানি না-আদিম মানুষ নানান সুরে আওয়াজ করতে করতে কিংবা আবেগ প্রকাশ করতে করতে ভাষার ব্যবহার শিখেছিল কি না। আমরা নিশ্চিত জানি না, পশু-শিকারের জন্য পাথরের তৈরি অস্ত্র ব্যবহারের পাশে প্রতেœাপলীয় যুগের মানুষ ভাবপ্রকাশের জন্য ভাষার ব্যবহার শিখে গিয়েছিল কি না।
বোধ করি, অজানা অতীতে ভাব/ চিন্তা প্রকাশের জন্য সার্বজনিক কোনও ভাষা না-থাকায় (এবং আরও অনেক কারণেই) আদিম মানুষের রীতিনীতি, মূল্যবোধ, উদ্ভাবনী-ক্ষমতা, নান্দনিকতা কিংবা মননশীলতা প্রসারিত হওয়ার পথটি অনেক কঠিন ছিল। অনেক ইঙ্গিতের সঙ্গে নিশ্চয় তারা ভাষাহীন আওয়াজে, দৃষ্টি বিনিময়ে, হাসি কিংবা চোখের জলে একে-অন্যের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করত।
মানুষ কর্তৃক ভাষা-সৃষ্টি বা ভাষা-ব্যবহারের আদি প্রক্রিয়া যেমনই হোক না কেন, ভাষা কালে-কালে মানুষের জীবনে আরও অনেক-কিছুর সঙ্গে বিবিধ সুরকে ছন্দকে কিংবা বন্ধনকে প্রসারিত করেছে। যে-সময় থেকে মানুষ তার ভাবের আদানপ্রদানে, যোগাযোগে ভাষাকে রীতি বা যৌক্তিকতার ভিতরে সত্যি সত্যি কাজে লাগাতে পারল সেই সময় থেকে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের গতিটাও বেড়ে গিয়েছিল-তা আমরা ভাবতেই পারি। ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে নানা পরিবর্তনের ভিতরেই ভাষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ জীবনযাপনকে অনেক সহজ এবং উন্নত করেছে। ভাষা মানুষকে কত অচেনা ছোটোবড় পথ চিনে নিতে সহায়ক হয়েছে, কত পথ-চলাকে করেছে সহজ।
ভাষা জাতিনির্ভর কোনও বিষয় না হলেও পৃথিবীতে কোনও কোনও জাতিসত্তা শুধু ভাষার ঐক্যে প্রতিষ্ঠিত, আবার ভাষাগত ঐক্য ছাড়া জাতীয় ঐক্য হওয়ার নয়, এমনটিও ভাবার অবকাশ নেই, যেহেতু ভাষাগত ঐক্য ছাড়াও জাতীয় ঐক্যের নজির আছে। পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বিপুল সংখ্যক মানুষের যোগাযোগ এবং মানসিক ঐক্যের বীজসূত্র এই ভাষা। বর্তমান আরব জাতির অস্তিত্ব ভাষার ঐক্যেই সমাবৃত। ইউরোপ-আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় নানা সময়ে স্থানিক ভাষা ও সংস্কৃতি জাতীয়তাবাদী চেতনায় অনুপ্রেরণার উৎস হিশেবে ভূমিকা রেখেছে। ফরাসিরা অবহিত যে, তাদের ভাষাই হল তাদের জাতিসত্তা কিংবা সংস্কৃতির সুর, শক্তি, গৌরব। ভারতীয়রা যে ভারতীয় এই ধরণা সৃষ্টিতেও সংস্কৃত ভাষার ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না (হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে সংস্কৃত ভাষাই স্বাদেশিক ভাষার মূলস্রোতে ছিল)।
আমরা তো জানি, বিশ শতকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিশেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তারই ঐক্যে। বাংলা ভাষার ইতিহাস থেকে প্রাচীন বঙ্গভূমি, বর্তমান বাংলাদেশ কিংবা বাঙালি জাতির ইতিহাসকে কোনও ভাবেই বিযুক্ত করা যায় না। বাংলা ভাষা বাঙালি সংস্কৃতির সুর, শক্তি, গৌরব। বাংলা ভাষা বাঙালির প্রাণের ভাষা, গানের ভাষা, হাসি-কান্না এবং স্বপ্নের ভাষা। অনেক প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বাংলা ভাষা পরিপুষ্ট হয়েছে। এই ভাষার ঐশ^র্য আছে, ইতিহাস আছে, সমৃদ্ধ সাহিত্য আছে। এই ভাষার সৌন্দর্য ফোটে আমাদের হৃদয়কাননে, সৌন্দর্য ফোটে চিন্তায়, কথনে, শ্রবণে, লেখাজোখায় কিংবা পঠনে।