প্রতারণার শেষ নেই বাংলাদেশে। কিছু মানুষের নিত্যনতুন প্রতারণার কৌশল দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। এবার নতুন প্রতারণার খবর পাওয়া গেল সংবাদমাধ্যমে। জানা গেল সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরাই প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। সরকারি নিয়ম হলো, একজন শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য অনলাইনে একটি আবেদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দক্রমে দিতে পারবে। ভর্তি নীতিমালায় এমন নির্দেশনা থাকায় কোন কোন অভিভাবক শিক্ষার্থীর নাম পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে একাধিক আবেদন করেছেন। এসব শিক্ষার্থীর কেউ কেউ একাধিক স্কুলে ভর্তির জন্য লটারিতেও মনোনীত হয়েছে। গতবছরও অনেকে এমন দুর্নীতি করেছিলেন।
তবে মিথ্যা তথ্য ও ভিন্ন ভিন্ন নামের জন্মনিবন্ধন দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লটারিতে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে শুরু করেছে বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর আগে একজন শিক্ষার্থী একাধিক আবেদন করেছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হবে। একাধিক আবেদনের প্রমাণ পেলে ওইসব আবেদন বা ভর্তি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
সুখবর হলো, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে লটারিতে একাধিক আবেদন করে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ১৭ শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়। ভর্তি বাতিল হওয়া এসব শিক্ষার্থীরা প্রথমে ভর্তি হয়ে যায়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়। ডা. খাস্তগীর স্কুলেও মিথ্যা তথ্য এবং একাধিক আবেদন করে গত বছর ভর্তির সুযোগ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, লটারিতে ভর্তির জন্য মনোনীত হওয়া শিক্ষার্থীরা একাধিক আবেদন করেছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে আমাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সব বিদ্যালয়ের প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যদি একাধিক আবেদন করে ভর্তির সুযোগ পায়, তাহলে ওই আবেদন বাতিল করা হবে।
ভাবতে অবাক লাগে আমাদের নীতিনৈতিকতা কোথায় নামলে আমরা নিজ সন্তানের শিক্ষাজীবনটাই শুরু করছি মিথ্যাচারের মাধ্যমে। যে শিশুর শিক্ষাই শুরু হচ্ছে মিথ্যা দিয়ে সে শিশু বড় হয়ে জীবনযাপনে, চিন্তা ও বিশ্বাসে সত্যকে ধারণ করবে কীভাবে? তার কাছ থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রই বা কী আশা করতে পারে? অসৎ পিতা-মাতার ঘরে একজন সৎ সন্তান, সুনাগরিক গড়ে উঠবেই বা কী করে? সবকিছু তো পুলিশ বা প্রশাসন পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে না। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব কি আমরা পালন করছি?
মতামত