সুপ্রভাত ডেস্ক »
অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খেলেও বাংলাদেশের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে বলে আশ্বস্ত করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসিতে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২ এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তাঁর এ আহ্বান আসে। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমি জানি, কিছু কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে নানাভাবে। অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। সেখানে আমি বলব যে বিভ্রান্ত হবার মত কিছু নেই।’
তাঁর ভাষায়, ‘বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য, যখনই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশটা অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, সকলের তা হয়ত পছন্দ হয় না, এটা হলো বাস্তব।’
একাত্তরে স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলে মনোনিবেশ করলে বাংলাদেশ ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল, সে কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এর পরে কিন্তু আর কখনো আমাদের প্রবৃদ্ধি এত বৃদ্ধি পায়নি। আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকারে আসার পর আমরা কিন্তু ৮ ভাগ পর্যন্ত আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাকে আরেক ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার উপর আবার মরার উপর খরার ঘা এসেছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের সাথে এলো স্যাংশান এবং পাল্টা স্যাংশান। যার ফলে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো বা ধনী দেশগুলোও আজকে আপনারা জানেন যে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এবং তারা হিমশিম খাচ্ছে।
‘তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে, খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায়ও আমি বলতে পারি বাংলাদেশকে এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
নানা কথা বলে মানুষকে ‘ভয় ভীতি দেখিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা’ করা হচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমি সরকার গঠন করি, ১৯৯৬ সালে, তখন আমাদের রিজার্ভ আমি পেয়েছিলাম মাত্র ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাত্র ২.৫ বিলিয়ন মাকিন ডলার ছিল তখন রিজার্ভ। আমরা তখন উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে এটা বৃদ্ধি করতে।
‘দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকার গঠন করি ২০০৯ সালে, তখন পেয়েছি মাত্র ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা সেই ৫ বিলিয়নকে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
মহামারীর মধ্যে সারা বিশ্বে লকডাউনে ভ্রমণ ও আমদানি বন্ধ থাকাকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তার সরকার বিনামূল্যে টিকা দিয়েছে, প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।
কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমদানি পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচা করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচা করতে হয়েছে। আমরা করেছি।
‘কিন্তু তারপর আমাদের আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, আমাদের ফসল উৎপাদন হচ্ছে, আমরা সার থেকে শুরু করে সব কিছু আমাদের কৃষকদের কাছে খুব স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।’
যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে যে যা পারবে, তাই উৎপাদন করার আহ্বান এ অনুষ্ঠানেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে খাদ্য সঙ্কট, তা যেন বাংলাদেশে না হয়।
‘সকলের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের কোনো রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কাটা কিন্তু আমাদের উপর এসে পড়বে এবং পড়তে যাচ্ছে, পড়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ বিশ্বটা এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বটা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাব।’
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে। আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলব না। আমরা নিজের ফসল নিজে উৎপাদন করব। নিজের দেশকে নিজে গড়ে তুলব। এই কথাটা যদি আমরা মাথায় রাখতে পারি, আর এই আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি চলতে পারি, ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কেউ রুখতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্থ সামাজিকভাবে উন্নতি করুক; সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকে এগিয়ে যাক, সেটাই তার সরকারের লক্ষ্য।
‘আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়ে গেছেন যে সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। বাংলাদেশ একটা দেশ, পৃথিবীতে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি যে প্রতিটি দেশের সাথেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এবং সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’