মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন :
এখন ডিসেম্বর মাস। শীতের রাত। চারদিক নিস্তব্ধ। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কিš‘ জোসেফের চোখে ঘুম নেই। তাই সে জানালার পাশে বসে আছে। জানালাটা খুলে দিল। ঘন কুয়াশার কারণে বাইরে কিছু দেখা যা”েছ না। জোসেফের খুব মন খারাপ। গত বছর বড়দিনেও সে তার তাসু খালার কাছ থেকে উপহার পেয়েছিল। আর বন্ধুদের তা দেখিয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিল। কিš‘ এবার লকডাউনের কারণে তার উপহার পাওয়া হবে না- এটা ভাবতেই যেন চোখের জল গড়িয়ে পড়বে অব¯’া।
এসব ভাবতে ভাবতে জানালার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে যে ঘন কুয়াশা ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। চাঁদটাকে যেন আরও উজ্জ্বল রুপার থালার মতো মনে হ”েছ। চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হ”েছ চারপাশ। সমস্ত গাছপালা যেন রিক্ততাকে বিদায় করে সে আলোতে স্নান করছে। মাঝে মাঝে জোনাকির আলো জোসেফকে নিয়ে গেল লকডাউনের আগের সময়গুলোতে। চাঁদনি রাতে বাড়ির ছোটবড় সবার সাথে নানারকম খেলা খেলত আর জোনাকপোকা ধরত। কার থেকে কে বেশি ধরবে, এটা নিয়ে কত প্রতিযোগিতা! এই করোনায় এখন সেটা অতীত। সারাটাদিন ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে জোসেফ।
আকাশের দিকে তাকাতে তার চোখ আটকে গেল। সে চাঁদের আলোয় দেখতে পেল আকাশ থেকে কী যেন একটা নিচের দিকে নামছে। একটু ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলো, একটা বৃদ্ধলোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। পরনে লালজামা। মাথায় লম্বাটুপি। মুখভর্তি সাদাদাড়ি। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। লোকটা ধীর পায়ে এগোতে থাকলো জোসেফের জানালার কাছে। মুচকি হেসে জোসেফকে বললো, ‘শুভ বড়দিন, শুভ বড়দিন!’ জোসেফও তাই বললো। তারপর বললো, ‘দাদু, আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না? কে আপনি?’ এ কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল লোকটা। ‘আমাকে চিনতে পারছো না? অবশ্য না চেনারই কথা। কারণ এর আগে আমি কখনো বাংলাদেশে আসিনি। আজই প্রথম এলাম। আমার নাম সান্তাক্লজ!’
‘সান্তাক্লজ!’ জোসেফ যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। ‘সান্তাক্লজ দাদু! যিনি প্রতিবছর বড়দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন শিশুদের জন্য নানারকম উপহার নিয়ে?’ ‘হ্যাঁ, দাদুভাই, আমি সেই সান্তাক্লজ। স্বর্গ থেকে এসেছি তোমাকে উপহার দেওয়ার জন্য।’ এই বলে লোকটা তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগে হাত ঢুকালেন। ব্যাগ থেকে রঙিন কাগজে মোড়ানো একটি প্যাকেট হাতে নিলেন। তিনি প্যাকেটটি খুলতে যাবেন, অমনি জোসেফের ঘুম ভেঙে গেল।
আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলতেই অবাক হয়ে গেল সে। তার বালিশের পাশেই পড়ে আছে সান্তাক্লজ দাদুর দেওয়া সেই উপহারের প্যাকেটটা। জোসেফ অবাক হয়ে ভাবলো, তাহলে কি সত্যিই সান্তাক্লজ দাদু তাকে উপহারটা দিয়ে গেলেন!
সে তার মাকে ডাকলো। মা রান্নাঘরে ছিলেন। ছেলের ডাক শুনে ছুটে এলেন। বললেন, ‘কি রে, কিছু বলবি?’
‘এই প্যাকেট টা’ …
জোসেফ শেষ করার আগেই তার মা হেসে বললেন, ‘কাল রাতে তোর ছোটমামা এসেছিলেন। আসার সময় তোর জন্য এই প্যাকেটটা নিয়ে আসলো। তুই ঘুমিয়ে ছিলি বলে তোকে ডাকিনি।’
জোসেফ তোতলাতে তোতলাতে বললো, ‘ছো ছো ছোট, মামা…. !