নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক আড়তের পণ্য। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জোয়ার পানিতে মধ্যরাতে মালামাল রক্ষায় প্রাণান্ত চেষ্টা করেও সব রক্ষা করতে পারেননি অনেক ব্যবসায়ী।
প্রায় শতাধিক খাদ্য গুদাম ও আড়তে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি, এলাচ, লং, জিরা, দারুচিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বস্তা ডুবেছে। নষ্ট হয়েছে অনেক ভোগ্যপণ্য।
গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ মূল সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও অনেক দোকানের ভেতর এখনও পানি জমে আছে। যা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন সেখানকার শ্রমিকরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এর আগে অনেকবার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে তলিয়ে গেছে এসব এলাকা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় নয়, জোয়ারের পানিতে প্রায়শই তলিয়ে যায় দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের এ পাইকারি বাজার। তাই বারবার এ ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য স্লুইস গেট এর নির্মাণকাজ ও প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৯৯১ সালে যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তার চেয়ে বেশি সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। চাল, ডাল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় যেটি স্লুইস গেট নির্মাণ করেছে, এটি নির্মাণ করার সময় চট্টগ্রামের এমপি, মেয়র, কাউন্সিলর ও স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক দিয়ে একটি পরিকল্পনা মাফিক স্লুইস গেট করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্লুইস গেটটি যে পরিমাণ প্রশস্ত হওয়ার কথা সে পরিমাণে স্লুইস গেটটি আনুমানিক হারে অনেক ছোট। যার জন্য পানি যেভাবে প্রবাহিত হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। যেমন রাতে সাড়ে নয়টায় পানি উঠছে, রাত দুইটা পর্যন্ত স্থিতি অবস্থায় ছিল। পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পানি যাওয়ার যদি ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমাদের তেমন বেশি ক্ষতি হতো না।
আমরা চাই স্লুইস গেটটি যদি একটু মডিফাই করা যায় বা প্রশস্তে একটু বড় করা যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পানি উঠলেও পানি যাতায়াতের পথ পরিষ্কার থাকলে ব্যবসায়ীদের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, বর্ষণের পানির পাশাপাশি এখন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খাতুনগঞ্জে আগে জোয়ারের যে পানি উঠতো, তার চেয়ে এবার দুই ফুট বেশি উঠেছে। পানি নামার পথ নেই, এর মধ্যে আবার জোয়ারের পানির আতঙ্ক আমাদের ওপর ভর করেছে। এই স্লুইস গেটের কোনো সুফল আসছে না।
মধ্যম চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সভাপতি এন আর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাত সোয়া দশটার নাগাদে হঠাৎ পানি উঠে, মালামাল নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। আমার পেঁয়াজ, এলাচ, দারুচিনির ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া জোয়ারের পানি এখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মিত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট সঠিক না থাকায় পানি ঢুকে যাচ্ছে। ড্রেনেজ সিস্টেমে অব্যবস্থাপনার কারণে পানি বাড়ছে বা জলাবদ্ধতা হচ্ছে। যথাযথভাবে ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ করতে হবে।
মধ্যম চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, এমন পানি এ চাক্তাইতে দেখিনি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এমন ব্যবসায়ী এলাকার প্রতি প্রশাসনে অবহেলা কাম্য নয়।
মধ্যম চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির কার্যকরী সদস্য আলাউদ্দিন আলো বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগে চাক্তাই যেভাবে পানি উঠতো এখনো উঠে। কোনো পরিবর্তন দেখছি না। শত ব্যবসায়ীর মালামাল পানিতে ভেসে গেছে। বস্তায় বস্তায় চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি মনে করি এই স্লুইসগেটের প্রশস্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে পানি উঠবে ঠিক তা নামার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পানি নামতে পারছে না। যার ফলে ব্যবসায়ীদের এমন ক্ষতি হচ্ছে।
চট্টগ্রামে সিত্রাং ও জোয়ারের পানিতে নগরীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে আগ্রাবাদ, ৩ নম্বর ফকিরহাট, নিমতলা, গোসাইলডাঙ্গা, সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, হালিশহর আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, কোরবানিগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, পাথরঘাটা, বহদ্দারহাটসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তাছাড়া বাসাবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে যাওয়ায় ঘরের আসবাবপত্র এবং দোকানের মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। জোয়ারের পানির সঙ্গে নালা-নর্দমা থেকে উঠে আসা ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয় প্লাাবিত এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।