সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
রূপকথা? সে তো কতই হয়েছে ক্রিকেট। অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, অভাবনীয়, এমন শব্দমালাও নানা সময়ে বসেছে কত জয়ের পাশে। কিন্তু ভারত যা করে দেখাল, তেমন কিছু কি আগে দেখেছে ক্রিকেট? রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় ঠাসা সিরিজের ফয়সালা হলো শেষ ম্যাচের শেষ ঘণ্টায় শেষ সময়ে। বীরোচিত পারফরম্যান্সে ভারত রচনা করল নতুন ইতিহাস। পতন হলো অস্ট্রেলিয়ার ব্রিজবেন দুর্গের। খবর বিডিনিউজের।
ব্রিজবেন টেস্টের উত্তেজনাপূর্ণ শেষ দিনে দুর্দান্ত রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারাল ভারত। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখল তারা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে।
সেই ভারত, সিরিজের প্রথম টেস্টে যারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৩৬ রানে, নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ইনিংস। প্রথম টেস্টের পর অধিনায়ক বিরাট কোহলি চলে গিয়েছিলেন ছুটিতে। একের পর এক ক্রিকেটার ছিটকে গেছে চোটে। শেষ টেস্টে দল গড়া হয় অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। সেই দলই চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়াকে।
সেই জয় এলো এমন এক ভেন্যুতে, যেখানে গত ৩২ বছরে ৩১ টেস্টে হারেনি অস্ট্রেলিয়া। যেটি তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ। যেখানে আগে কখনোই জেতেনি ভারত। শক্তি আর অভিজ্ঞতায় অনেক পেছনে থেকেও প্রবল বিক্রমে লড়াই করে সেই দুর্গ জয় করল অজিঙ্কা রাহানের দল।
হ্যাঁ, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হলেও ‘রাহানের দলই।’ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে প্রথম টেস্টে বিধ্বস্ত হওয়া দলকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে, চোট-আঘাতে বিপর্যন্ত হলেও যেভাবে উজ্জীবিত করেছেন, নিজের ছাপ রেখেছেন মাঠের ভেতরে-বাইরে, এই জয় তাই রাহানের নেতৃত্বেরও।
শেষ দিনের নায়ক অবশ্য শুভমান গিল, চেতেশ্বর পুজারা আর রিশাভ পান্তরা। দুঃসাহসী তারুণ্য আর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ধরা দিয়েছে এই জয়।
শেষ দিনে গতকাল মঙ্গলবার ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩২৪ রান। ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা গিলের ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ভারতকে দেখায় জয়ের পথে ছোটার শক্তি। আস্থার প্রতিমূর্তি হয়ে, হাতে-গায়ে বলের আঘাত সয়ে সোয়া ৫ ঘণ্টা এক পাশ আগলে রেখে দলকে ভরসা জোগান পুজারা। আর অস্ট্রেলিয়ান বোলিং গুঁড়িয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়ে যান পান্ত। ৮৯ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ম্যাচের সেরাও ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যানই।
শেষ দিনের শুরুটা অস্ট্রেলিয়া করেছিল ভালো। রোহিত শর্মাকে ৭ রানেই ফিরিয়ে দেন কামিন্স। ভারত তাতে দমে যায়নি। গিল ও পুজারার জুটিতে লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি তারা।
দ্বিতীয় উইকেটে এই দুজন যোগ করেন ১১৪ রান। গিলের সেঞ্চুরি যখন মনে হচ্ছিল গ্রেফ সময়ের ব্যাপার, ন্যাথান লায়নের দারুণ এক ডেলিভারিতে থামতে হয় তাকে। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯১ রান করে ফেরেন ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ভারত ততক্ষণে জয়ে চোখ রাখতে শুরু করেছে। অধিনায়ক রাহানের ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংস আশার পাশে জোগায় আরও হাওয়া। দ্বিতীয় সেশনে ২৫ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলে ভারত।
দ্বিতীয় নতুন বলের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই অস্ট্রেলিয়ার আশা কিছুটা জাগিয়ে তোলেন কামিন্স। ২১১ বলে ৫৬ রান করে বিদায় নেন পুজারা। পরে মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে (৯) অল্পতে থামান কামিন্স।
তবে জয়ের সুবাস পেয়ে যাওয়া ভারতকে দমানো যায়নি। পান্তের একেকটি দাপুটে শটে লেখা হতে থাকে ইতিহাস গড়ার তাড়না। ওয়াশিংটন সুন্দরের ২২ রানের ইনিংস আর পান্তের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটিতে ত্বরানিত্ব হয় জয়। শেষ দিকে সুন্দর ও শার্দুল ঠাকুর দ্রুত ফিরলেও জিততে সমস্যা হয়নি।
৯ চার ও ১ ছক্কায় ১৩৮ বলে পান্তের ৮৯ রানের ইনিংসে ৩ ওভার বাকি রেখেই ম্যাচ জিতে আনন্দে ভাসে ভারতীয়রা।
কামিন্স যথারীতি এ দিনও দুর্দান্ত বোলিংয়ে নেন ৪ উইকেট। সিরিজের সর্বোচ্চ ২১ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যান অব দা সিরিজ। কিন্তু তার সতীর্থ বোলাররা ছিলেন ম্লান। দেখা যায়নি পরিকল্পনার ছাপ। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে বোলিং করে মিচেল স্টার্ক ছিলেন খরুচে।
ব্রিজবেনে রান তাড়ায় জয়ের আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার ২৩৬, সেটিও সেই ১৯৫১ সালে। শেষ দিনে এখানে তিনশর বেশি রান তাড়া করে জয় ছিল অকল্পনীয়। ভারতের এই জয় তাই যেন কল্পনাকেও হার মানানো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৬৯
ভারত ১ম ইনিংস: ৩৩৬
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২৯৪
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২৮) ৯৭ ওভারে ৩২৯/৭ (আগের দিন ৪/০) (রোহিত ৭, গিল ৯১, পুজারা ৫৬, রাহানে ২৪, পান্ত ৮৯*, মায়াঙ্ক ৯, সুন্দর ২২, শার্দুল ২, সাইনি ০*; স্টার্ক ১৬-০-৭৫-০, হেইজেলউড ২২-৫-৭৪-১, কামিন্স ২৪-১০-৫৫-৪, গ্রিন ৩-১-১০-০, লায়ন ৩১-৭-৮৫-২, লাবুশেন ১-০-৪-০।
ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৪ ম্যাচ সিরিজে ভারতের ২-১ ব্যবধানে জয়
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাভ পান্ত
ম্যান অব দা সিরিজ: প্যাট কামিন্স
খেলা