নিজস্ব প্রতিবেদক »
এবার ৬৭হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা। এর আগে গত বছর ২০২৩ সালে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এবং চাষাবাদ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। ডিজেলের দাম বেশি, কৃষি শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় প্রতিকানি জমি চাষ করতে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান কৃষকরা। এদিকে বোরোর বীজতলা নষ্ট না হওয়া এবং লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ হওয়ার সম্ভাবনায় এ মৌসুমে কাক্সিক্ষত ফলনের ব্যাপারে আশা ব্যক্ত করেছেন কৃষিকর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০২১ সালে ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল; যা চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭ হাজার ১০ হেক্টর। অর্থাৎ তিন মৌসুমের ব্যবধানে চট্টগ্রামে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১০ হাজার হেক্টর জমি। এবার চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বাঁশখালীতে ১১ হাজার ৪১৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সবচেয়ে কম ১০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলায়।
সরেজমিনে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বোরো চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন। আবার কেউ জমিতে আমন রোপণ করছেন। অনেকেই ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষাবাদের উপযোগী করছেন। অনেকেই রশি দিয়ে জমি সমান করছেন। এবার বোরো আবাদে অধিক হারে যন্ত্রপাতির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। আগে যে পরিমাণ জমি রোপন করতে ২ শ্রমিকের ১দিন সময় লাগত দেখা যায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ঘণ্টার মধ্যেই তা রোপণ করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। বোরো আবাদ পুরোটা সেচ নির্ভর হওয়ায় বোরেতে খরচ বেশী হয়, সে অনুযায়ী ধানের দাম সেভাবে পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বোরো ধানে অতিরিক্ত পানি লাগার বিষয়টি পুুরোপুরি সঠিক নয়। সেচের পানির হিসেবে কৃষক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে এক হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ লিটার পানি লাগে। অপচয় বাদ দিয়ে শুধু ধানের উৎপাদনে প্রকৃত পানির খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি ধান উৎপাদন করতে ৫৫০-৬৫০ লিটার পানিই যথেষ্ট। এছাড়াও বোরোতে কম-বেশি সব কৃষকরাই লাভবান হয়। এছাড়া এবার লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ হবে। তাই এ মৌসুমে কাক্সিক্ষত ফলনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, ‘আমরা অন্যান্য মৌসুমের মতো বোরোতেও সমানভাবে আবাদ করি। আবাদের সময় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেলেও কিছুদিন পর পানির সংকট দেখা দেয়। এরপর ধান বের হওয়ার সময় বৃষ্টির কারণে অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও খরচ পুষিয়ে ঘরের জন্য রাখতে পারি, কিছু বিক্রিও করি।’
বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ বরুমছড়া গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আমরা নিজেরাই চাষাবাদ করি। কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়না। কৃষি অফিস থেকে বীজ পেয়েছি কিছু, আর কিছু বাজার থেকে কিনেছি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রায় প্রতিবছরই আমরা ধান বিক্রি করতে পারি। তবে গত দু’য়েক বছর ধরে সেচের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘এবার ৬৭হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মত বোরো আবাদ শেষ হয়েছে। পুরোদমে বোরো রোপণের কাজ করছে কৃষকরা। অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান জানান, বোরোর বীজতলা শতভাগ হয়েছে। আশা করছি আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে। পুরো দেশে আমন ধান প্রধান শষ্য হলেও ফলনের দিক দিয়ে বেশি হচ্ছে বোরো। বোরো চাষাবাদে পানির সেচটা গুরুত্বপূর্ণ। সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে যদি পানির ব্যবস্থা করা যায়, স্লুইচ গেইটগুলো যদি সংস্কার করা যায় আর সেচের জন্য যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে বোরো চাষাবাদ আরো বাড়বে। আর হাইব্রিডের জন্য আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছি। এই মৌসুমে ৪২ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা কৃষি অধিদপ্তরের এই জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা।
বোরোর লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে, বাড়তে পারে ফলনও
প্রতিকানিতে খরচ হবে ১৩-১৪ হাজার টাকা