নিজস্ব প্রতিবেদক »
নানা ধরনের ইস্যু দাঁড় করিয়ে দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। শীতকালীন কয়েকটি সবজি ছাড়া চাল, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংসসহ সকল ধরনের পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়াতে বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীর দেউড়ি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়- আলু, পেয়াঁজসহ শীতকালীন দুয়েকটি সবজির দাম কম থাকলেও সকল ধরনের পণ্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। পাইকারি বাজারে আটা-ময়দাতে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের মসুরের ডালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ব্যবসায়ীরা জানালেও তা কমার লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে আরো ৭ থেকে ৮ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সংকটের দোহাই দিয়ে ব্রয়লার, মাছ ও মাংসের দামও বাড়তি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র তথ্য অনুযায়ী, গতকাল নাজিরশাল ও মিনিকেট টাইপের সরু চাল বিক্রয় হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। মাঝারি টাইপের লতা-পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। বছরের ব্যবধানে ৭ শতাংশ দাম পর্যন্ত বেড়েছে নাজিরশাল ও মিনিকেট টাইপের চালে।
অন্যদিকে নগরীর বাজারগুলোতে রমজানকে কেন্দ্র করে, আমদানি সংকটের দোহাই দিয়ে চড়া দামে ছোলা বিক্রি করছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি ছোলা (মানভেদে) বিক্রয় করেছে ৮৪ থেকে ৯৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি নিচ্ছে কেজিপ্রতি ৮ টাকার উপরে। তাছাড়া বাজারে মানভেদে সকল ধরনের ডালের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত। গতকাল পাইকারি বাজারে মাঝারি আকারের তুরস্কের মসুর ডাল বিক্রয় হয়েছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা, মুগ ডাল ১১৮ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া রমজানকে টার্গেট করে শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, গরম মসলা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচসহ সবগুলোরই দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের ছোলা ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম সওদাগর বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের বেশি দামে ছোলা কিনতে হয়েছে। আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) ৮৪ থেকে ৮৭ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এর থেকে কম দামে বিক্রি করলে আমরা লোকসানে থাকবো।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ছোলা এসেছে। দাম কোনোভাবে বাড়ার কথা নয়। কেউ যদি বাড়তি নেয় তাহলে প্রশাসনকে জানানো দরকার। আগে এলসি সংকট ছিল, ডলার সংকট ছিল, ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারেনি। এখন সবকিছু সচল। খাতুনগঞ্জের আড়তে পর্যাপ্ত মালামাল আসতে শুরু হয়েছে। সুতরাং এভাবে সরবরাহ বাড়লে রমজানে কোনো ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়।’
এদিকে মাছ ও মাংস বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। গতকাল রেয়াজউদ্দিন বাজারে পাবদা ৩৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ টাকা, চিতল ৪৫০ টাকা, কোরাল (সাইজভেদে) ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, বাটা মাছ ৩২০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, চিংড়ি সাইজভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া ডিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ১০ টাকা কমলেও বাজার সংকটের দোহায় দিয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, গরু ও খাসির মাংস।
সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল বাজারে ব্রয়লারসহ সকল ধরনের মুরগিতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছে । গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, সোনালি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা ও দেশি ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া গত ১০ দিনের ব্যবধানে গরু ও খাসির মাংসে কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে।
গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৯০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকায়।
বাজারে মুরগির ডিমের ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। ডিমের দাম আর কমার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে জানান ডিম ব্যবসায়ীরা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা রফিকুল আনোয়ার নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিত্যপণ্যের যে চড়া দাম এতে পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবকিছু নাগালের বাইরে। যেভাবে খরচ বেড়েছে সেভাবে আমাদের আয়তো বাড়েনি। করোনাকালীন সময়েও এমন চড়া দামে বাজার ছিল না।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রবিন দাস বলেন, সমুদ্র থেকে তেমন মাছ আসছে না। আমাদেরকে দেশের নানা জায়গার প্রজেক্ট থেকে মাছ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মাছ চাষিরা খাদ্যের দাম বেড়েছে বলে বাড়তি দামে আমাদের কাছে বিক্রি করছে। ফলে বাজারে একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন কয়েকটি সবজির দাম কম থাকলেও অনান্য মৌসুমের সবজির দাম তেমনটা কমেনি। অনেক সবজির দাম একশো টাকার উপরে।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি বাধাকপি ও ফুল কপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শিমবীজ ১০০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, তিতা করলা ১০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। শাকের মধ্যে প্রতি আঁটিতে সরিষাশাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, লালশাক ১০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।