নিজস্ব প্রতিবেদক »
গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়ে চলেছে চালের দাম। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার। উর্ধ্বগতির এই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। একইভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ডিম, মাছ, চাল, ডাল, আটা, ময়দার দামও। নতুন করে বেড়েছে ভোজ্যতেল, আদা, পেঁয়াজ, চিনি, আলু ও দাম। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে ভোক্তারা। এতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বক্সিরহাট ও খাতুনগঞ্জ বাজার ঘুরে এবং ভোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা করে বেড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল এখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি। একইভাবে মিনিকেট চালও বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজিতে। এছাড়া জিরা নাজির ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারি সিদ্ধ ৬৮ টাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে চড়াদামে বিক্রি হয়েছে চিনিগুড়া। গতকাল পাইকারি বাজারে চিনিগুড়া ১৩৫ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর গরিবের মোটা চাউল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন সংস্থা বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বাড়ছে ৫ শতাংশের উপরে। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের উপরে। আর মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) ২ শতাংশের উপরে দাম বেড়েছে।
চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় খাতুনগঞ্জের রাজাখালী রোডের চাউল আড়তদার অমৃত চাউল ভা-ারের ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ থেকে বাজারের প্রায় দোকানে তেমন চাউল আসেনি। তাছাড়া মিনিকেট চালের বাজার সংকট রয়েছে। যে মিনিকেট ছিলো ৯২ থেকে ৯২ টাকা কেজি, তা আজকের বাজারে ১৩২ টাকা ছাড়িয়েছে। মিনিকেটের মতো দামি চাউলগুলো এখন করপোরেট কোম্পানিরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে মিনিকেট এখন আর সাধারণের নাগালের মধ্যে নেই।’
খাতুনগঞ্জের রহমান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চালের আমদানি কম। বাইরে থেকে চাউল আসছে না। নতুন চাল না আসা পর্যন্ত কয়েকদিন চালের দাম বাড়তি থাকবে।’
নিত্যপণ্যের বাজার ও চালের বাজার নিয়ে তানভীর আহমেদ নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষদের পক্ষে ৭০ টাকা কেজি চাউল খাওয়া অসম্ভব। কিন্তু বাধ্য হয়ে অনেকেই ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি চাল খাচ্ছেন। চালের দাম কেজিতে অন্তত ৩০ টাকার কম হওয়া উচিত বলে মনে করি।’
বেড়েছে আদা ও রসুনের, কমেছে পেঁয়াজের দাম
এদিকে আমদানি সংকটের দোহাই দিয়ে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আদা ও রসুনের বাজার। বাজারে দেশি আদার চাপ একটু বাড়লেও বাজারশূন্য বাইরের আদা। খাতুনগঞ্জের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত চায়না আদা কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকা এবং থাইল্যান্ডের আদা কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানিকৃত রসুন বাজারে সংকটের পাশাপাশি দেশি রসুন বাজারে তেমন নেই। গতকাল আমদানির রসুন বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩১ থেকে ৩৩ টাকা দরে ও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ আছে। এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে।’
মুরগির সংকট, স্থিতিতে অন্যান্য মাংসের দাম
গতকাল নগরীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহের দামে সকল ধরনের মাংস বিক্রি হলেও সংকট রয়েছে ব্রয়লার মুরগির। বক্সিরহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘শীতকালে ফার্মের মালিকরা তেমন মুরগি পালন করেননি। বর্তমান অনেক ফার্ম বন্ধ। তার মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। যার ফলে বাজারে মুরগির সংকট রয়েছে। তবে সেই হারে তেমন দাম বাড়েনি।
গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজিতে। সোনালি মুরগি ২২০ টাকা ও দেশি মুরগি কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে হাড্ডি ছাড়া গরুর মাংস ৮০০ ও হাড্ডিসহ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাসির মাংস ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
স্থিতিশীল মাছের বাজার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম তেমন বাড়েনি। গত সপ্তাহের দামে প্রায় মাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাজারে দেশীয় ও প্রজেক্টের মাছের যোগান ভালো থাকলেও সমুদ্রের মাছ তেমন দেখা যায়নি।
বক্সিরহাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, ‘শীতকালে জেলেরা তেমন সমুদ্রে যাচ্ছেন না। তার মধ্যে নৌপ্রশাসন অভিযান চালায় । যার ফলে সমুদ্রের মাছ বাজারে কম।’
বক্সিরহাটে দেখা যায়, পাবদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পোয়া ৩০০ টাকা, চিতল ৪০০ টাকা, গলশা ৫০০ টাকা, কোরাল (সাইজভেদে) ৩২০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, বাটা মাছ ৩২০ থেকে ৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৫৮০ থেকে ৭৫০ টাকা, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাড়ছে ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম
খাতুনগঞ্জের বাজারে সকল ধরনের ডালের দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত ডাল ৯ শতাংশ ও দেশি ডালে ১৭ শতাংশের উপরে বাড়ছে। গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে আমদানিকৃত বড় দানা মসুর ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ও মাঝারি দানা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও নেপালি মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ছোলা (মানভেদে) বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
তাছাড়া সয়াবিন (লুজ) ও বোতলে লিটার প্রতি ১৪ শতাংশের উপরে বেড়েছে। গতকাল পাইকারি বাজারে লিটার প্রতি সয়াবিন (লুজ) ১৬৫ থেকে ১৮৭ টাকা ও ১ লিটারের মোড়কজাত সয়াবিন (বোতল) ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাড়ছে সবজির দাম
নগরীর বাজারগুলোতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫ তেকে ১০ টাকা বাড়ছে। তাছাড়া অনান্য মৌসুমের সবজিগুলোর মধ্যে প্রায় সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি বাঁধাকপি ও ফুল কপি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শিমবীজ ১১০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কাচামরিছ ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁয়াজপাতা (প্রতি আঁটি) ২০ টাকা, মূলা ২০ টাকা ও পেঁপে ২০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে শাকের মধ্যে প্রতি আঁটিতে সরিষা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
শীতকালীন শাকসবজির বাজার নিয়ে বক্সিরহাটের শফিক স্টোরের মালিক মো, রুবেল বলেন, কয়েকদিন ধরে সকল ধরনের শাকসবজির দাম বাড়ছে। গত বুধবার বরবটি ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন থেকে আর সবজির দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না।