আনোয়ারা উপকূলে নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাছ শিকার
সুমন শাহ্, আনোয়ারা
নির্দেশনা রয়েছে আপাতত মাছ ও কাঁকড়া শিকারের জন্য কোন জেলেকে সমুদ্র প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না। একই সাথে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও। এ সরকারি সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে বিভিন্ন মাছ শিকারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জেলেরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনটায় দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষী বাজার এলাকার সৈকত চরে আষাঢ়ের বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জেলেরা নৌকা ভর্তি একের পর এক নিয়ে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এরমধ্যে হু হু করে উত্তাল সাগরের পানি বেড়েই চলেছিলো। মাছের ঝুড়ি আসতেই বাছি বাছি লঅ, এক টুকরি এক হাজার-এক হাজার। (বেছে বেছে নেন, এক ঝুড়ি এক হাজার টাকা) এভাবে শোরগোল আর ব্যস্ততা আর কেনাবেচার জন্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে জেলেরা।
প্রতিবছরই এসময়ে হরেক রকমের মাছ ধরে জেলেরা। সেই মাছ এবারও ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে জেলেদের জালে। রাতে বা দিনে নৌকা আর জাল দিয়ে সাগরের বুকে মাছ ধরেন, আবার নদীর পাড়েই জমজমাট হাট বসিয়ে মাছ কেনাবেচা করেন জেলেরা। উপকূলে ডিসেম্বরের শেষের দিকে থেকে শুরু করে ছোট মাছ আহরণ চলে এখানে। এ কাজে উপকূলের অন্তত সাড়ে পাঁচশ নৌকা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন জেলেরা। সমুদ্রে আহরণের পর পরই উপকূলে নিয়ে আসার কারণে ক্রেতারা পান বিভিন্ন জাতের তরতাজা ছোট মাছ। আর এসব তাজা মাছের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় জেলেরাও হচ্ছেন লাভবান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপকূলের রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষী বাজার এলাকা সংলগ্ন সৈকতে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতি ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তারা দিব্যি সমুদ্র থেকে ছোট-ছোট নৌকা করে মাছ শিকার করছে জেলেরা। সাগর থেকে একের পর এক মাছ বোঝাই নৌকা উপকূলে ভিড়ছে আর ক্রেতারা পানিতে নেমে দরদাম করছেন। আবার নৌকা থেকে ঠেলাগাড়ি করে মাছ বালিয়াড়িতে তুলে কেউ কেউ দাম হাঁকছেন। বৃষ্টির মধ্যে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ মাছের মৌসুম শেষ হওয়ার পর উপকূলে শুরম্ন হয় ছোট মাছ আহরণের। নৌকা, জাল আর শ্রমিক নিয়ে অপেক্ষাকৃত অল্প পুঁজিতে জেলেরা সাগরে বিনিয়োগ করে ধরা ও বিক্রি করেন। সাগরে নৌকা নিয়ে মাছের জাল ফেলে মাছ ধরেন একদল। ওই মাছ দিনে একবার কিংবা দুইবার উপকূলে নিয়ে আসেন জেলেদের আরেকটি দল। আর উপকূলে এনেই বিক্রি করেন তারা। এতে করে মাছ গুলো তরতাজা থাকে। মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত আর আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত নৌকাগুলোতে তিন থেকে পাঁচজন জেলে কাজ করেন। প্রায় সাড়ে পাঁচশত নৌকা দিয়ে মাছ আহরণের কাজ করেন জেলেরা। মাছ গুলো উপকূলে আনার পর টুকরি (এক ধরনের মাছ রাখার পাত্র) করে উপরে রেখে টুকরি হিসেবেই বিক্রি করা হয়। একেক টুকরিতে ৩০-৩৫ কেজি মাছ থাকে আর বিক্রি হয় দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ মাছই হলো লট্টিয়া, চিংড়ি, ছুরি আর বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় বহদ্দার নৌকার মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, মাছ শিকার না করা জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আমাদের কোনো আয় নেই। কিছু নৌকা গোপনে এসব মাছ ধরছে। মাছ না ধরলে আমরা খাব কি। তবে সাগরে এখন আগের চেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ছে না। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মাছের ব্যবসা ভালো হয়। বর্তমানে মাছও তেমন পাওয়া যায় না। এ অঞ্চরের জেলেরা মাছ কেনাবেচার জন্য দোভাষী বাজার এলাকাই বেছে নেন। এখানেই পাইকারী ও খুচরো ব্যবসায়ীরা মাছ কিনেন জেলেদের কাছ থেকে। কর্ণফুলীর ব্রিজঘাট থেকে মাছ কিনতে আসা রাজিব বলেন, আমি দুই টুকরি মাছ কিনলাম ২ হাজার টাকায়। আর ৫শত টাকায় এক টুকরি কিনলাম। এখন মাছে দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। এখানে কয়েক জাতের মাছ আছে, এগুলো বাজারে বিক্রি করলে কিছুটা লাভ হবে আমার।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, এসময়ে সাগরে মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। জেলেদের জন্যও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে তাদের। এরমধ্যে যে সব জেলেরা গোপনে সাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।