বিশ্ব শৌচাগার দিবস এবং আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাল

১৯ নভেম্বর দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব শৌচাগার দিবস। বিশ্বব্যাপী স্যানিটেশন সংকট এবং মানসম্পন্ন টয়লেটের ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা; পয়োনিষ্কাশনের সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। এই দিনে নিরাপদ স্যানিটেশনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সবার জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নিশ্চিতের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই লক্ষ্য অর্জনে দেশ কতটা এগিয়েছে, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শৌচাগারের কী অবস্থা।এমন একটি দিনে উঠে এসেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শৌচাগারের করুণ অবস্থা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। আবার যেগুলো আছে সেগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না, যা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির অন্যতম বাধা। শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থাও খুবই নিম্নমানের। প্রায় অর্ধেক শৌচাগার বন্ধই থাকে।

এ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। আবার যেগুলো আছে সেগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না, যা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির অন্যতম বাধা। শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থাও খুবই নিম্নমানের। প্রায় অর্ধেক শৌচাগার বন্ধই থাকে। প্রয়োজনের তুলনায় শৌচাগার সংখ্যা কম থাকে, বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য আলাদা ও পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় শৌচাগারগুলো মেরামত করা হয় না বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় না। ফলে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। খবরে প্রকাশ, শুধু গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলেই নয়, রাজধানীর অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা নেই। এসব স্কুলে উন্নত শৌচাগার থাকলেও মূলত নিয়মিত যত্ন ও দেখভালের অভাবে তা আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। তখন শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই এগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে চলে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান তিন-চার তলাবিশিষ্ট হলেও প্রতি তলায় শৌচাগার নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অন্য তলায় গিয়ে তা ব্যবহার করতে হয়। স্কুলে শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেই গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ। অথচ মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকলে লেখাপড়া শেষ করার হার, বিশেষ করে শিক্ষা সমাপনীর হার এবং বাল্যবিয়ের হারে ইতিবাচক ফল আনে। ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আলাদা শৌচাগার থাকায় ক্লাসে মেয়েদের উপস্থিতি ১৯ শতাংশ এবং ঋতুকালীন সেগুলোর ব্যবহারের সুযোগ থাকলে উপিস্থিতি বাড়ে ২০ শতাংশ। ফলে মেয়েদের বাল্যবিয়ের হারও কমে যায়।
২০১৪ সালে স্থানীয় সরকারি বিভাগের পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের উদ্যোগে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ জাতীয় ভিত্তিমূল জরিপ (ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সার্ভে) পরিচালনা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি চর্চার বিষয়ে ধারণা পেতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জরিপ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে ৮৪ শতাংশ স্কুলে উন্নত এবং ১২ শতাংশ স্কুলে অনুন্নত ল্যাট্রিন আছে। স্কুলগুলোর ৫৫ শতাংশ ল্যাট্রিনে তালা দেয়া থাকে। খোলা ল্যাট্রিনগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহারের উপযোগী। ৮০ শতাংশ স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ল্যাট্রিনের কাছাকাছি হাত ধোয়ার জন্য পানির ব্যবস্থা আছে মাত্র ৪৫ শতাংশ স্কুলে। পানি সাবানসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা আছে এক-তৃতীয়াংশ স্কুলে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি মাসে স্কুলগুলোর গড়ে খরচ করে ৬১ টাকা। মাসিক বা পিরিয়ড কিশোরীদের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেবল ৬ শতাংশ ছাত্রী মাসিক সম্পর্কে স্কুল থেকে জানতে পারে। কেবল ১১ শতাংশ স্কুলের ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার আছে।

এই দৈন্য শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, আদালত থেকে শুরু করে পাবলিক প্লেস সব জায়গায় একই অবস্থা। শৌচাগার বা টয়লেট দেখে বোঝা যায় সে দেশের মানুষ কতটা স্বাস্থ্য সচেতন। বাংলাদেশের স্থান যে এ বিষয়ে তলানীতে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।