তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে এখন দ্বিতীয়। অথচ বিরূপ পরিস্থিতির মুখে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত ।
ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদায় এখন ভাটার টান। গত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি বাড়লেও কমে গেছে প্রবৃদ্ধি। দুই বাজারে নতুন রপ্তানি আদেশের গতিও তেমন নেই। আগামীতে রপ্তানি আদেশ বাড়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এ বাস্তবতায় উদ্বেগ বাড়ছে রপ্তানিকারকদের।
বেশি ভোগাচ্ছে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে পশ্চিমা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ার ফলে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পোশাকের ফ্যাশনে থাকে খরা মৌসুম বা লিন সিজন। এ সময় বাজারে ভোক্তা চাহিদা থাকে তুলনামূলক কম।
বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য তুলে ধরেছে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক। এই পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশের মতো। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৫৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫৭৭ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বাজার। রপ্তানি কমার কারণে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ এখন ১৮ শতাংশেরও কম। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ২১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ২৭ দেশের জোট ইইউর পরিস্থিতিও একই রকম। এ কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা নেই অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদের।
কাঁচামাল ব্যবহারের হিসাবের ওপর পোশাক রপ্তানির আদেশের চিত্র পাওয়া যায়। কোনো কারখানা রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর কতটুকু কাপড় বা অন্য কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারবে, একে বলা হয় ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সনদ। সরকারের পক্ষে এই সনদ দেয় তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, কয়েক মাসে ইউডির সংখ্যা অনেক কমেছে। গত জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০৭টি। এর আগের বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩ হাজার ১০টি। একইভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউডির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ১১২টি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল দুই হাজার ২৮১টি।
সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি ইউডির বিপরীতে পোশাকের পরিমাণও কমছে। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ইউডির আওতায় গড়ে পাঁচ হাজার পিস পোশাক থাকত। এখন ৫০০ পিসের বেশি থাকছে না। এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেইন ইফেক্ট।
রপ্তানি আদেশ কম থাকায় অনেক কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় সব কারখানায় একই পরিস্থিতি। অন্যদিকে ব্র্যান্ড ক্রেতারা চাইছেন পোশাকের দাম কম দিতে, তাঁরা ডিসকাউন্ট চাইছেন। একসঙ্গে রপ্তানি আদেশ না দিয়ে ছোট ছোট স্পটে কম রপ্তানি আদেশ দিচ্ছেন। এ কারণে কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন পরিকল্পনা ঠিক মতো করা যাচ্ছে না।
পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ন্যায্য দর ও চাহিদা থাকা জরুরি।
এ মুহূর্তের সংবাদ