সিডিএ ১৯৬১ ও ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছিল। সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো সংস্থা তা প্রণয়ন করলে অন্যান্য সংস্থা তা অনুসরণ করবে। বিগত সময়ের মাস্টারপ্ল্যানের অনেক প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আবারো প্রণয়ন হতে যাচ্ছে ২০৪০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনায় কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় সিডিএ’র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী’র সঙ্গে-
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : এবারের মাস্টারপ্ল্যানের সাথে ১৯৯৫ মাস্টারপ্ল্যানের মৌলিক পার্থক্য কি হতে যাচ্ছে ?
আবু ঈসা আনসারী : মাস্টারপ্ল্যান মানেই হলো পুরো নগরীর প্ল্যান। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে চারটি (স্ট্রাকচারাল, ড্রেনেজ, ট্রান্সপোর্টেশন ও আরবান এরিয়া প্ল্যান) খণ্ড ছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু এবার মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ছয়টি খণ্ড তৈরি করছি। স্ট্রাকচারাল প্ল্যান, অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান, ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান, ট্রান্সপোর্টেশন মাস্টারপ্ল্যান, সাসটেনেবল এনভায়রনমেন্টাল প্ল্যান এবং অর্গানাইজেশনাল এরেঞ্জড টু ইমপ্লিমেন্ট দ্য মাস্টারপ্ল্যান।
সুপ্রভাত : তাহলে কি ড্যাপ বিলুপ্ত হচ্ছে ?
ঈসা আনসারী : নতুন মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ড্যাপ বিলুপ্ত হচ্ছে। মূলত: ড্যাপের গাইডলাইন কিংবা কমপোনেন্টগুলো স্ট্রাকচারাল মাস্টারপ্ল্যানে থাকবে এছাড়া কোনো এলাকা ব্যাপকভাবে প্ল্যান করতে আমরা অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান করছি। সিডিএ’র আওতাধীন এলাকার মধ্যে প্রাথমিকভাবে তিনটি এলাকায় অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান করা হবে।
সুপ্রভাত : অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান মূলত কি ?
ঈসা আনসারী : কোনো একটি এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা করাকে মূলত অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান বুঝায়। যেমন-জেলা প্রশাসন এখন জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় কারাগার স্থানান্তর করতে চায়। এখন পুরো জঙ্গল ছলিমপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট, আবাসিক, বাণিজ্যিক স্থাপনা নিয়ে ডিটেইলস প্ল্যান করাকে বলা হয় অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান। মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নগরীর প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করে নগরীর তিনটি অংশের এমন অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান তৈরি করে দেবেন মাস্টারপ্ল্যানের আওতায়।
সুপ্রভাত : বর্তমানে ড্যাপের আলোকে অনেক এলাকা কৃষিজমি, কমিউনিটি সুবিধা, আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প জোন হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ড্যাপ বিলুপ্ত হলে কি সেসব জোন বাতিল হয়ে যাবে?
ঈসা আনসারী : ড্যাপ বিলুপ্ত হলেও তা বাতিল হবে না। এগুলো স্ট্রাকচারাল মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় থাকবে। তবে বিগত সময়ের ভূমি ব্যবহার, বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং আগামীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
সুপ্রভাত : পাহাড় ও জলাধার সংরক্ষণের বিষয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যানে কি নির্দেশনা আসছে?
ঈসা আনসারী : পাহাড় সংরক্ষণ নয় পাহাড়েও উন্নয়ন করা যায়। তবে সেটা সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে। এজন্য বিগত ৩০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে এবং আগামীর নগর প্রবৃদ্ধির চিত্র প্রক্ষেপণ করে পাহাড় ও জলাধার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত দেবেন সেই আলোকে মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হবে।
সুপ্রভাত : এবারের মাস্টারপ্ল্যানে সাসটেনেবল এনভায়রনমেন্টাল প্ল্যান রাখার উদ্দেশ্য কি?
ঈসা আনসারী : নগর জুড়ে যে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নেয়া হবে সেগুলো পরিবেশের জন্য টেকসই কিনা কিংবা টেকসই আকারে কিভাবে নেয়া যাবে সেসব বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে এই প্ল্যানে। এতে উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপরীতমুখী হবে না। একে অপরের সহযোগী হিসেবে এগিয়ে যাবে।
সুপ্রভাত : কিন্তু আমরা অতীতের মাস্টারপ্ল্যানগুলো বাস্তবায়নে অনেক সীমাবদ্ধতা দেখেছি। এসব সীমাবদ্ধতা কিভাবে সমাধান করবেন?
ঈসা আনসারী : অতীতের মাস্টারপ্ল্যানগুলোতে গাইড লাইন ছিল। কিন্তু সেই গাইড লাইন অনুযায়ী কে প্রকল্প গ্রহণ করবে এবং কে বাস্তবায়ন করবে সেবিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমরা এবার মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ‘অরগানাইজেশনাল এরেঞ্জমেন্ট টু ইমপ্লিমেন্ট দ্য মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করবো। এর আওতায় কোন কাজ কোন সংস্থা করবে সেবিষয়ে নির্দেশনা থাকবে। ফলে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিয়ে আর সমস্যা হবে না। পরবর্তীতে সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা জবাবদিহি করবে।
সুপ্রভাত : চট্টগ্রাম মহানগরীর কোন এলাকার মাটির অবস্থা কেমন? এবিষয়ে কোনো রিপোর্ট নেই। বর্তমান মাস্টারপ্ল্যানে কি তেমন কোনো সুপারিশ থাকবে ?
ঈসা আনসারী : পুরো নগরীর মাটির গঠন কাঠামোর রিপোর্ট তৈরি করা কষ্টসাধ্য। তবে আমরা সামগ্রিকভাবে পুরো নগরীর মাটির গঠন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে এলাকা ভিত্তিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করে দিবো।
সুপ্রভাত : ড্যাপের আওতায় বিএস জরিপের মাধ্যমে পুরো নগরী ডিজিটাইলজড ছিল। এবারো কি তেমন থাকবে ?
ঈসা আনসারী : বিএস শিটের পাশাপাশি এবার আমরা আর এস শিটকেও ডিজিটাইলাইজড করছি। এতে জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। এছাড়া একটি ভূমি পূর্বে কেমন ছিল তা জানা যাবে।
সুপ্রভাত : চলমান মাস্টারপ্ল্যান কবে নাগাদ শেষ হবে ?
ঈসা আনসারী : ২০২৪ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।