নিজস্ব প্রতিবেদক »
বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যানডার হ্যাসল চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে পোশাক, প্রযুক্তি ও শিপিং খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি গতকাল তিনটি সংস্থার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে বেলজিয়ামের দূতাবাস না থাকলেও ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণে তিনি আশ্বস্ত করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যানডার হ্যাসল চট্টগ্রাম সফরে এসে গোলটেবিল বৈঠক করেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সঙ্গে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার তৈরি পোশাক বেলজিয়ামে রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে পণ্য বৈচিত্র্য হতে পারে। আমরা এ বৈচিত্র্য নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী। এছাড়া বাংলাদেশে বেলজিয়ামের কোনো দূতাবাস নেই। তবে আমরা চেষ্টা করবো সুইডেনের দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে বেলজিয়ামের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে।
ওই সভায় চেম্বার সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে তৈরিপোশাক ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বেলজিয়ামে রপ্তানি হয়। এছাড়া বাংলাদেশ বেলজিয়াম থেকে আয়রন, স্টিল, মেশিনারি, কেমিক্যালসসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেলজিয়ামের বিনিয়োগ খুবই নগণ্য। তাই এখনই সময় এসেছে বাংলাদেশে বেলজিয়ামের বিনিয়োগ বাড়ানোর।’
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভায় স্টিল সেক্টর, জনশক্তি রপ্তানি, ব্লু ইকোনোমি, মৎস্য, মসলা, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বেলজিয়াম রাষ্ট্রদূতকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত এবং অর্থনৈতিক মিশন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশে হাই কোয়ালিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সোলার সিস্টেম, নদী বা পুকুর পানি থেকে পরিশোধনের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বন্দর ড্রেজিং এর জন্য ভারী যন্ত্রপাতি, আইসিডি/ লজিস্টিক কন্টেইনার হ্যন্ডেলিং এর যন্ত্রপাতি, মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য ভারী সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মতবিনিময় সভায় চেম্বার সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন, ওয়ালোনিয়া’র ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার গোয়ালিয়াম ডি বাসুমপিয়েরে, ফ্ল্যান্ডার্স’র ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বাবেতে ডেসফজ, চেম্বার পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর) ও অঞ্জন শেখর দাশসহ বিএসআরএম গ্রুপের প্রতিনিধি সঞ্জয় দাশ বক্তব্য রাখেন। বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যানডার হ্যাসল বলেন, বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে বাণিজ্য প্রতিনিধির এই সফর। এখানে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের সাথে আলোচনা হবে যার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে কিভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো গভীর করা যায় সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করবো।
তিনি বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং ও শিপ বিল্ডিং সেক্টরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেলজিয়ামের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বাংলাদেশের বৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে কৃষিভিত্তিক শিল্প, কসমেটিক্স, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাইসাইকেল ইন্ডাষ্ট্রিতে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অথবা একক বিনিয়োগের আহবান জানান।
চসিকের সভায় বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহৎ বন্দরের মালিক বেলজিয়াম। চট্টগ্রামের বন্দর ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করতে আমরা চট্টগ্রামে এসেছি এবং পর্যবেক্ষণ থেকে চট্টগ্রামে বিনিয়োগের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক। বর্তমানে বাংলাদেশে বেলজিয়ামের বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে বেলজিয়ামের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে ভারী শিল্প এবং প্রযুক্তিখাতে বেলজিয়ামের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
মতবিনিময়ের পূর্বে বেলজিয়ামের তিনটি ব্যবসায়িক গ্রুপ কিপকো ড্যামাকো গ্রুপ, এ্যাকুয়া বার্ক ও আইবিএ প্রতিনিধিদলের সাথে চেম্বার সদস্যদের বিটুবি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।