বিপ্লব উদ্যানে আর স্থাপনা চায় না নগরবাসী

আমরা ক্ষমতায় থাকলে একধরনের আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আরেক ধরনের আচরণ করি। আ জ ম নাছির যখন মেয়র তখন তিনি বিপ্লব উদ্যানের খোলামেলা পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করে খাবারের দোকান করে দিয়েছিলেন। পরে খোরশেদ আলম সুজন ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। এরপর রেজাউল করিম চৌধুরী এসে আ জ ম নাছিরের পথই অনুসরণ করেন। এ দীর্ঘ সময়ে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বিরোধীদলে থেকে মেয়রদের এমন কাজের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে এবার মেয়র হিসেবে তিনিও বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা বাড়াচ্ছেন।
এই উদ্যানের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে নূর হাফিজ প্রপার্টিজ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য চুক্তি করেছে সিটি করপোরেশন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি উদ্যানে বিদ্যমান একতলা স্থাপনা বর্ধিত করে চারতলা পর্যন্ত করতে পারবে। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে চুক্তিতে।
নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন চুক্তিতে খোলা স্থানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আগের যে জায়গায় দোকান রয়েছে, সেখানে স্থাপনা করতে হবে। তবে এ জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমতি নিতে হবে।
১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ২ নম্বর গেট এলাকায় এক একর জায়গায় বিপ্লব উদ্যান গড়ে তোলা হয়।
এ নিয়ে গত সাত বছরে বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নে তিনটি চুক্তি করেছে সিটি করপোরেশন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন একটি এবং ২০২৩ সালের আগস্টে সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আরেকটি চুক্তি করেছিলেন। তবে আদালত উদ্যানে অবকাঠামো নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। আর এই চুক্তি চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে সিটি করপোরেশন। এসব চুক্তির মাধ্যমে একসময়ের সবুজ উদ্যানটিতে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন মেয়ররা।

এখন যা হতে যাচ্ছে, দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক প্রচার ও সহায়তা–সংক্রান্ত ডিজিটাল স্ক্রিন, এটিএম বুথ ও কিয়স্ক স্থাপন করতে পারবে। উদ্যানের খালি মাঠে ২১৫ ফুট দীর্ঘ ও ৫৪ ফুট প্রস্থের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে অবকাঠামো করা যাবে। চারপাশে হাঁটার জন্য হাঁটাপথ বা ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। উদ্যানের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য দেড় হাজার বর্গফুটের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘর নির্মাণ করা হবে। উদ্যানের পূর্ব পাশে ডিজিটাল স্ক্রিন, বিলবোর্ড, মেগা সাইন থাকবে। আগের দুই মেয়রের আমলে করা দুটি চুক্তিতেও প্রায় একই ধরনের শর্ত ছিল।
শুধু ইট-সিমেন্টের অট্টালিকা নির্মাণেকে উন্নয়ন বলে না। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে পরিকল্পিত উন্নয়ন। একটি নগরে খালি জায়গা, পার্ক, জলাশয় ইত্যাদিরও দরকার আছে। অথচ চট্টগ্রামে তা অত্যন্ত কম। দুয়েকটি যা আছে সেসব বাণিজ্যিক প্রবণতার ফাঁদে ধ্বংস হয়ে যাবে তা কাম্য নয়। আমরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করি। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাই।