সহেলী আদাম :
আতিক সাহেব একজন আপাদমস্তক সরকারি কর্মচারী ছিলেন। সরকারের প্রতি আনুগত্যের সর্বো”চ দিয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। সমগ্র চাকুরী জীবনে চেষ্টা করেছেন যতদূর সম্ভব সৎ থেকে দায়িত্ব পালন করতে। যেখানে সম্ভব হয়নি মানিয়ে নিয়েছেন। অবৈধ কিছু হাতে বা পকেটে তোলার চেষ্টা করেননি। অবশ্য সিস্টেম বলে এদেশে প্রচলিত পঙ্কিলতার প্রতিবাদও করেননি। ভেবেছেন ‘আমি একা এসবের বিরুদ্ধ স্রোতে গিয়ে বদলাবার কে। আর সেটা কি আমার দ্বারা সম্ভব?’ কেবল মাঝে মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনটা বিরক্তিতে ভরে উঠতো। কী দরকার ছিলো ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’ এসব লেখার। ধর্মের বই পড়লে বাক্যগুলো তখন মনের মধ্যে আরও বেশি চড়চড় করে উঠতো। ভাবতেন, কী লাভ হয়েছে এসব লিখে? লোকজনকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলায় দুলিয়ে বিভ্রান্ত করা ছাড়া। কখনও মনে হতো, বেশি পড়ালেখা করাটাই যত দোষের হয়েছে। অত পড়ালেখা না করলে এসব বাক্য অজানাই থেকে যেত, ফলে কাজ করতে গিয়ে কখনও থমকে দাঁড়াতে হতো না। কৃষক লোকটাই সুখে আছে। সে জানে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত এভাবে বছরের কোন কালে কী করতে হবে। এজন্য তার মনে কোনো দ্বিধা নেই, দ্বন্দ্ব নেই। কেবল প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া।
তবে এসব নীতিবাক্য সামনে এসে দাঁড়ালেও সিস্টেম শব্দটা তাকে সামনের দিকে এগোতে সাহায্য করতো। মনের ভিতরে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এলে তিনি আবার কর্তব্যকর্মে পূর্ণ মনোযোগ দিতেন। এভাবেই তিনি সমগ্র চাকুরী জীবন শেষ করে এসেছেন।
অবসরে যখন গেলেন তখন দেখলেন ঢাকা শহরে আড়াই কাঠার একখ- জমি ছাড়া আর কিছু নেই। প্রভিডেণ্ট ফান্ড আর পেনশনের টাকায় ভরসা করে আড়াই কাঠা জমির উপর বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন দুই ছেলে আর এক মেয়ের জন্য তিন তলার একটা বাড়ি করে ইহজাগতিক দায়িত্ব শেষ করবেন। রাজমিস্ত্রি এবং ইঞ্জিনিয়ার মিলে তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন হাতের টাকায় অনায়াসে সুন্দর একটা বাড়ি হবে। এমনকি চার তলাও হয়ে যেতে পারে।
কিš‘ কাজে নেমে তাদের নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কৌশলের চাহিদা মেটানো আর রড-সিমেন্টের ক্রমবর্ধমান বাড়তি দাম যোগাতে-যোগাতে কাজের অর্ধেক পর্যন্ত এসে ঠেকে গেলেন। দেখলেন, হাতে অবশিষ্ট টাকা যা আছে তা যদি বাড়ির পেছনে ঢালেন তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। ছোট ছেলেটার পড়ালেখা তখনও শেষ হয়নি। তাকে টানতে হবে। ডেভেলপারদের কাছে না দিয়ে মনে মনে একটু আফসোস করলেন।
বড় ছেলেমেয়ে দুটো নিজেদের সংসার নিয়ে দেশের বাইরে থাকে। বড় ছেলেকে বললে কিছু সাহায্য সে হয়তো করবে, তবে তিনি তা চান না। ব্যাংকে গেলে কিছু লোনও পেতে পাবেন। শেষ বয়সে এসে ঋণগ্রস্ত হওয়ার ই”েছটাও তেমন নেই । সারাজীবন অনেককবার অভাবে পড়েছেন, তাতে কষ্ট ভোগ করেছেন কিš‘ ঋণগ্রস্ত না হওয়ার গর্ব কথা প্রসঙ্গে লোকজনের সামনে বলে এখনও তৃপ্তি পান।
অর্থচিন্তায় হাবুডুবু খেতে খেতে আতিক সাহেবের মনে পড়লো, তার ৫০ একর জমির কথা। বিক্রি করে বিশ-ত্রিশ লক্ষ যা পান বাড়িটা শেষ করতে পারবেন। যদিও জমিটা তার নিজের নামে নয়, স্ত্রী সহেলীর নামে। বিক্রির কথা বলতেই সে রাজি হয়ে গেল। আদতে এই জমি তাদের কোনো কাজেই আসছিল না।
তখন তিনি রাঙামাটির এডিসি রেভিনিউ। অনেকের দেখাদেখি ৫০ একর খাসজমি স্ত্রীর নামে বন্দোবস্তি নিয়েছিলেন। জমিটা তিনি কখনও চোখে দেখেননি। জানেন না পাহাড়, না সমতল অথবা জঙ্গল নাকি লোকালয়। শুধু বন্দোবস্তির সময় ম্যাপশিট আর দাগ-খতিয়ান এসব দেখে নিয়েছিলেন যে, জমিটা খাস। এতদিন জমিটার কথা ভুলেই ছিলেন। বাড়িতে এক গিন্নি ছাড়া অন্য কেউ জানেও না। তিনি সরকারি কর্মচারী এত সম্পত্তি অর্জনে সমস্যা হতে পারে জেনে জমিটা সহেলীর নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছিলেন।
বেশি দিন দেরি করতে হলো না। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দামে কেনার একজন গ্রাহকও যোগাড় করে ফেললেন। ভদ্রলোকের পাহাড়ে একটা বাগান করার শখ। তবে জমি দেখে পছন্দ হলে তবে কিনবেন।
জমি দেখতে এসে আতিক সাহেব যে ধাক্কাটা খেলেন তার চর্চা তিনি যখনই জমিটার কথা মাথায় এসেছিল তখন থেকে করে আসছিলেন। বারবার এবং বারবার। ধাক্কার দৃশ্যটা অনেকবারই তাকে বৃদ্ধ বয়সের দোহাই না দিয়ে আনমনা করে দিয়েছিল এবং তিনি ধাক্কা সামলানোর একটা সম্ভাব্য উপায়ও ভেবে রেখেছিলেন। বাড়ির ইট-সুরকির বাজেটের সাথে সম্ভাব্য খরচ হিসেবে তার সাথে বাজেটে আলাদা নতুন একটা খাত খুলে তহবিল বরাদ্দ করে রেখেছিলেন।
কিš‘ ধাক্কাটা তিনি সত্যিকার অর্থেই খেলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ধাক্কাটা সামলানোর জন্য হয়তো অনুমানের চেয়ে বাজেটের দৈর্ঘ্য-প্র¯’ এবং ওজন একটু বাড়বে কিš‘ একেবারে ব্যর্থ হবেন সেটা ভাবেননি। ব্যর্থতার বিস্ময় তাকে একেবারে বিমূঢ় করে দিল।
-‘শুয়োরের বা”চা, জংলি কোথাকার, চেহারাটা দেখেছেন? এত টাকা তোর বাপে দেখেছে? বিশ লক্ষ টাকা সাধলাম, তাও বলে হবে না।’ ফিরতি পথে গাড়িতে ওঠে আতিক সাহেবের শ্যালক সমানে হেডম্যান লোকটাকে গালাগাল করে যা”িছল। যার সবগুলো ব্যর্থতার গ্লানি হজম করতে না পারা অপমানবোধের দুর্গন্ধযুক্ত নির্যাস।
আতিক সাহেব সব নীরবে শুনে যা”িছলেন। তার মনে তখন অন্য সমীকরণের ঝড়। লোকটার সামনে ১০ লাখ নতুন টাকার ঝলক ছড়িয়ে যখন ব্রিফকেস খুুলেছিলেন তখন লোকটার চোখের তারা দেখে মনের কথা পড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। লোকটা তার দিকে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে চোখ ছোট করে তাকিয়েছিল। তিনি কোনোভাবেই উদ্ধার করতে পারেননি সেই কুহক দৃষ্টির গূঢ় রহস্য। লোকটার চোখের তারায় কী ফুটে উঠেছিল? দুনিয়ায় কম লোকই কাঁচা, নতুন টাকার এমন আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারে। কীভাবে সে এতগুলো টাকার লোভ সংবরণ করল? নাকি আ¯’ায় আনতে না পারা অবিশ্বাসের ঘন অরণ্যে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছিল। নাকি করুণার বিষদৃষ্টি দিয়ে তাকে অবজ্ঞার সাগরে ভাসিয়ে হৃদয়ে হীন সুখের রঙিন প্রলেপ লাগা”িছল।
লোকটার একটাই জবাব ছিল, কিছু টাকার বিনিময়ে তিনি একটা গ্রামের লোককে উ”েছদ করতে পারবেন না। তার মানে সে কি আরও টাকা চায়?
কিš‘ এ প্রস্তাব দেয়ার সময় আতিক সাহেব আর করে উঠতে পারেননি। লোকটা জবাবের পর তার দিকে ক্যাপস্টেন ফিল্টারের একটা প্যাকেট ঠেলে দিয়ে নিজে একটা শলা টেনে নিয়ে আগুন ধরিয়ে ওপরের ঠোঁট নিচের দিকে আর নিচের ঠোঁট ওপরের দিকে টেনে নাকের বদলে কপালে ঝুলে থাকা চুলের গোড়ায় যখন সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দি”িছল তখন তিনি অপমানের সূক্ষ্ম চিনচিনে বোধটাকে নিজের কলিজায় বিড়বিড় করে ঘুরে বেড়া”েছ টের পেয়েছিলেন।
অবসরে গেলেও এত বছরের আমলা মন এতেই ওলট-পালট হয়ে চলতে চলতে হঠাৎ স্পর্শ পাওয়া ঝিনুকের মত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্রিফকেস বন্ধ করে তিনি উঠে চলে এসেছিলেন। গোটা চাকরি জীবনকালে দেখে এসেছেন মানুষকে তার কাছে এসে ধরনা দিতে। আর কীভাবে তারা টাকার কাছে নত হয়। আজ তিনি এসেছেন ধরনা দিতে আর রীতিমত অপমানজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তার মনে হল।
শ্যালকের হুজুগে কথাবার্তার তপ্ত বাক্যেগুলো নীরবে সহ্য করে এলেও হেডম্যানের রহস্যময় আচরণে হৃৎপি-ে উৎপন্ন হওয়া চিনচিনে ব্যথাটা অনেকদিন বুকের গভীরে টের পেয়েছিলেন কিš‘ প্রকাশ করেননি। লোকটা কি আরও বেশি টাকা চায় নাকি ওটা লোকটার ভাষ্যমতে আসলেই একটা গ্রাম। সত্যমিথ্যা দুটোই হতে পারে। যদি সত্য হয়, তাহলে ওটা অবশ্যই একটা গ্রাম। আর মিথ্যা হলে অনেকগুলো সম্ভাবনা এর মধ্যে লুকিয়ে আছে। যেমন লোকটার চাহিদা হয়তো আরও বেশি। হতে পারে শ্যালকের ভাষ্য অনুযায়ী লোকটা সাম্প্রদায়িক অথবা মালিকের অব¯’া জেনে লোকটা নিজেই জায়গাটা দখল করতে চায় বা দখল করে বসে আছে। পাহাড়ে হেডম্যানরা হয় প্রভাবশালী। এমনকি কেউ কেউ নিজেকে মৌজার মালিক ভাবতেও পছন্দ করে।
বন্দোবস্তি নেয়া জায়গাটা তিনি কখনও চোখে দেখেননি। তার চেয়ে লোকটার আচরণের সত্য-মথ্যা নির্ণয় করার চিন্তাটাই আতিক সাহেবের মস্তিষ্ক দখল করে নিলো। এতে জমিটুকু দেখার ই”েছটা ক্রমে তার মনের মধ্যে চেপে বসতে লাগলো। অন্তত এক পলক দেখলেই সব প্রশ্নের মীমাংসা হয়ে যাবে। না দেখে মরাটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যর্থ কাজগুলোর একটি বলে বিবেচিত হবে।
দুমাস পরে তিনি আবার রওনা দিলেন। এবার জায়গাটা দেখে সত্যমিথ্যার মীমাংসা করে তবেই ফিরবেন। সাথে কাউকে নিলেন না। সহেলী তার ভাইয়ের কথা বলেছিল। আতিক সাহেব রাজি হননি। আবোল-তাবোল কথা বলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। যদিও কথাগুলো বর্তমান সময়ের জন্য নিরেট সত্য। কিš‘ আতিক সাহেবের মত নির্ঞ্ঝাাট মানুষের কাছে এগুলো বাড়াবাড়ি এবং অন্যলোকের সামনে ঠোঁট কেটে প্রকাশ করে ফেলাটা মর্যাদাহানিকর।
এবার তিনি নগদ টাকা সাথে করে আনেন নাই। যদিও জানেন নগদ টাকার একটা আলাদা প্রভাব আছে। চোখের সামনে যখন টাকার বান্ডিল করা নোটগুলো চকচক করে ওঠে তখন খুব কম লোকই তার মায়াবী আহবানকে উপেক্ষা করতে পারে। কিš‘ আতিক সাহেব এতগুলো নগদ টাকা নিয়ে এতটা ঘুরে বেড়ানোর রিস্ক নিতে চাননি। ছোট হ্যান্ডব্যাগে চেকবইটা ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন।
গতবার কথা হয়েছিল হেডম্যান লোকটার অফিসে এবার সরাসরি বাড়িতে চলে গেলেন। ঢাকা থেকে রাত্রে যাত্রা করে পৌঁছালেন সকাল-সকাল। হেডম্যানের বাড়িতে ঢুকে তিনি একটু অবাক হলেন। পাহাড়ের সাধারণ একজন মানুষের বাড়ি কেমন হতে পারে বিশ-পঁচিশ বছর আগে দেখা খুঁটিওয়ালা মাচাংঘরের সাথে পরবর্তী বিশ বছরের আধুনিকায়নের ফলে পরিবর্তিত যে কাল্পনিক কাঠামো তিনি মনে এঁকে নিয়েছিলেন তার ধারে-কাছেও নেই। বরং এটি যে মাটির পুরোনো গুদাম বাড়ি এবং সম্ভবত তার গায়ে সিমেন্ট-বালুর প্লাস্টার লাগিয়ে রং করা হয়েছে। সেটা টিনের চালের কাছাকাছি মাটির দেয়ালের ইঞ্চি ছয়েক অনাবৃত অংশ এবং ঘুলঘুলি দেখলে বুঝা যায়। মাটির ঘরে এমন ঘুলঘুলি থাকে। পাকাঘর হলে থাকতো কারুকার্যখচিত ছিদ্রযুক্ত ভেন্টিলেশন সিস্টেম। লম্বা প্রশস্ত বারান্দা। কিছুটা জমিদার স্টাইলের বৈঠকখানা। মনে হয়, এরাও তার মত সাক্ষাৎ প্রার্থী। লম্বালম্বি বৈঠকখানার শেষ মাথার মাঝখানে একটা আসন। সম্ভবত গৃহকর্র্তা এসে বসেন। দুপাশে সোফা। সোফায় কয়েকজন লোক চায়ে চুমুক দি”েছ। মাথার ওপরে দেয়ালে গৌতম বুদ্ধের একটা ছবি। তার নিচে দু’পাশে কয়েকজন জাতীয় নেতার ফটোগ্রাফ। অনুমান করে নিলেন লোকটা রাজনীতির সাথে জড়িত। দৃশ্যটা আতিক সাহেবকে একটু যেন আশার আলো দেখালো। কারণ তার সমস্ত পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা হ”েছ রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতি সমার্থক।
আধঘণ্টার মত অপেক্ষা করার পর হেডম্যান লোকটা বৈঠকখানায় প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। আতিক সাহেব বুঝতে পারলেন না এ মুহূর্তে তারও উঠে দাঁড়ানো উচিত কি না। এখানেও তার আমলামন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। দ্বিধাদ্বন্দ্ব দুলতে-দুলতে ভাবলেন, অন্যদের জন্য যেটা আনুগত্য সেটা তার জন্য সৌজন্য। তিনি ওঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে গেলেন। এটিই তার জন্য মানানসই। লোকটা তাকে চিনতে পারলো। কুশল জিজ্ঞাসার সাথে ‘স্যার’ বলে সম্বোধনে তিনি মনে মনে পুলক বোধ করলেন। সম্বোধনটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মনে স্বস্তি এনে দিলো। যদিও অবসরের পর হতে জনগণের কাছ থেকে এটি তিনি আর আশা করেন না। তারপরও সম্বোধনটা তার কাছে স্বস্তিদায়ক।
আতিক সাহেব অপেক্ষা করতে লাগলেন। দর্শনার্থী কমলে তারপর বিষয়টা উত্থাপন করবেন। এর মধ্যে লোকজনের কথাবার্তা শুনছেন কিš‘ বুঝতে পারেননি কিছুই। চট্টগ্রামী আঞ্চলিক ভাষায় যখন কথা চলছিল তখন কিছুটা বুঝতে পারছেন মনে হলেও প্রসঙ্গ না জানায় সবকিছু তার কাছে অর্থহীনই ঠেকছিল।
ঘণ্টা দুএক পরে লোকজন কমে এলে হেডম্যানই প্রসঙ্গটা তুললেন। আতিক সাহেব যথসম্ভব নম্র অথচ করুণা উদ্রেকের সর্বো”চ প্রচেষ্টা মিশ্রিত ভাষায় জায়গাটা বিক্রির প্রয়োজনীয়তার কথা তুললেন। সন্তানদের মাথা গোঁজার ঠাঁই পিতা হিসেবে দিয়ে যেতে পারার সান্ত¡না যেন তাকে তৃপ্ত করে এই প্রত্যাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
আতিক সাহেব দেখলেন, এতো যেন বিনয় প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। লোকটা আরও নরম হয়ে স্যার সম্বোধন করে বললো, সে মৌজাপ্রধান। মৌজায় বসবাসকারীজন এক অর্থে তার সন্তানতুল্য। সে তাদের কীভাবে বা¯‘চ্যুত করবে।
দু’একজন লোক তখনও বসে আছে দেখে আতিক সাহেব বললেন, তিনি একটু পার্সোনালি কথা বলতে চান। লোকটা তাকে একটা আলাদা রুমে নিয়ে গেলো। তিনি চেকবই বের করে কলম খুলে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। তার যত ডিমান্ড চাইলে তিনি লিখতে পারেন। বুঝা যা”েছ, আতিক সাহেব খ্যাপে গেছেন।
লোকটা বিনয়ের সাথে সেটা ফিরিয়ে দিলেন।
(আগামী সংখ্যায়)