মোহাম্মদ কাইয়ুম <<
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি জনসমাগম এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে। সবক্ষেত্রে জনসমাগম এড়িয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি জোরদার করা হলেও উল্টো চিত্র দেখা যায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায়। সেখানে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার পরিবর্তে উল্টো নমুনা দেওয়ার জন্য গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের বুথে গিয়ে এমনই চিত্র পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের ২টি বুথে শতাধিকের উপরে নমুনা দিতে আসা মানুষের ভিড়। দূর থেকে ভিড় দেখে বোঝা মুশকিল সেখানে হচ্ছে কি? একটি বুথের সামনে এগিয়ে দেখা যায়, নমুনা সংগ্রহকারী স্বাস্থ্যকর্মীকে ঘিরে আছে কয়েকশ’র উপরে মানুষ। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে যেখানে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলা হয় সেখানে ঠিক উল্টোভাবে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া অনেকে ভিড় এড়িয়ে কিছুটা দূরে অবস্থান করলেও তাদেরকেও ভিড়ের মধ্যে গিয়ে নমুনা দিতে যেতে হচ্ছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থাপনার চেয়েও অব্যবস্থাপনার চিত্রের দেখা মেলে বেশি। এছাড়া অব্যস্থাপনার কারণে সঠিক তথ্য না পাওয়ায় অনেককে এক বুথ থেকে অন্য বুথে দৌড়াদৌড়ি করতেও দেখা যায়। এ অব্যবস্থাপনার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করতে আসা ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকিই থেকে যায়।
ভিড়ের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি কেন দাঁড়িয়ে আছেন? জিজ্ঞাসা করতেই বোয়ালখালী থেকে করোনা পরীক্ষা করতে আসা মোহাম্মদ হেলাল অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বলেন, ‘এরা যে সিস্টেমে নমুনা নিচ্ছে আমাদেরকে সে সিস্টেমে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নেই, বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়েই এভাবে দাঁড়াচ্ছি।’
এখানে করোনা পরীক্ষার নামে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ব্যবস্থা করেছে জানিয়ে জাফরান রাফি চৌধুরী নামের একজন বলেন, ‘এখানে যে ব্যবস্থাপনা, মনে হচ্ছে পরীক্ষা করতে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবো। এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করেই কোভিড পরীক্ষা নিতে পারে না। তিনি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেই জানতে চান এখানে এক হাজারের উপরে মানুষের মধ্যে দু’একজনের পজিটিভ থাকতে পারে না?
অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ জানিয়ে পলাশ মাহমুদ নামে এক বিদেশগামী বলেন, আমাদের দেশের সিস্টেমই এরকম। কেউ কি বলতে পারবে এখানে সবাই নেগেটিভ? এদের মধ্যে একজনেরও পজিটিভ নেই? নিজের সুরক্ষা নিজেকে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য ভিড় এড়িয়ে এখানে বসে আছি। এরা কখনোই আমার সুরক্ষা দিতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিদেশগামীদের নমুনায় আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। আমরা এখানে সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছি। কাউকে মাস্ক ছাড়া বুথে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যাদের নমুনায় পজিটিভ আসে তাদের বেশিরভাগ আগে থেকেই আক্রান্ত। এছাড়া কেউ পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসলেও করোনায় আক্রান্ত হতে তাকে ৩ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। তারপরেও আমরা যতদূর সম্ভব সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দরকার হলে আগামীতে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’