সম্পূর্ণ বিষয়টিকে জটিল করে তুলবার পর অবশেষে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিদেশ যেতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
আগামী ২৩ জুলাই থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের তথ্য বিবরণীতে জানা গেছে । বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার সময় এবং পরীক্ষাগারও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো, বরিশালের শের-এ বাংলা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ ল্যাবরেটরি অ্যান্ড মেডিসিন রেফারেল সেন্টার, ইন্সটিটিউট অভ পাবলিক হেলথ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসম, নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ইতালিতে ফিরে যান হাজারখানেক বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের’ করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইতালি সরকার।
এরপর গত ৯ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজের দু’টি ফ্লাইটে ইতালিতে যাওয়া ১৬৫ বাংলাদেশিকে সেদেশের বিমানবন্দরে নামতে না দিয়ে ওই উড়োজাহাজেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ঐ ঘটনার পর গত ১২ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বিদেশে যেতে চাইলে বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে ‘করোনা নেগেটিভ’ সনদ নিয়ে যেতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে বিদেশযাত্রায় যথাযথভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হলো। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনাগুলো হলো, যাত্রার ৭২ ঘণ্টার পূর্বে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হবে না। যাত্রার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে রিপোর্ট ডেলিভারি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। নমুনা প্রদানের সময় পাসপোর্টসহ যাত্রীদের বিমান টিকেট ও পাসপোর্ট উপস্থাপন এবং নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষার নিমিত্তে নির্দিষ্টকৃত পরীক্ষাগার যে জেলায় অবস্থিত সে জেলার সিভিল সার্জন অফিসে স্থাপিত পৃথক বুথে তাদের নমুনা প্রদান করবেন।
নমুনা প্রদানের পর থেকে যাত্রার সময় পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আবশ্যিকভাবে আইসোলেশনে থাকবেন।
বিদেশ যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ প্রাপ্তির জন্য ল্যাবে গিয়ে নমুনা প্রদানের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহে ৪ হাজার ৫০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
এর আগে করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির বেশ কিছু ঘটনা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। দেশে এখন তা নিয়ে তদন্ত হলেও বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য করে তুলতে বেশ বেগ পেতে হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা আছে স্বীকার করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন যেসব প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল কলেজকে কভিড-১৯ টেস্টের সনদ প্রদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে তাদের ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার যদি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয় তাহলে তা বিদেশ যাত্রীদের জন্য নতুন বিড়ম্বনা তৈরি করবে শুধু নয় বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হারানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।