বিজ্ঞানে আগ্রহ বাড়াতে
চতুর্মাত্রিক মুভিবাস
নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহাকাশ মানেই আমাদের কাছে অজানা এক রহস্য। একটি বাসের আসনে বসে এ রহস্যের মধ্যে ঘুরে আসার কল্পনা করলে কেমন হয়? অকল্পনীয় রহস্য আবৃত মহাকাশে ঘুরে আসার এমনই দৃশ্য দেখা মেলে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের চতুর্মাত্রিক মুভিবাসের আসনে বসে। আনন্দের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জানা ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর এমন ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল মাঠে চতুর্মাত্রিক মুভি সমৃদ্ধ ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনীর এ আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীতে মহাজাগতিক রহস্যের সৌরজগৎ, কৃষ্ণ গহ্বর, পৃথিবীর সৃষ্টি, বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং সাগরতলের জীব জগতের চতুর্মাত্রিক মুভি দেখানো হয়। চতুর্মাত্রিক মুভিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ভীতি দূর করার পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী গড়ে তোলে।
প্রদর্শনী দেখতে আসা কলেজিয়েট স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তামিম তাওসিফ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন প্রদর্শনী দেখলাম। মুভিগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমিও সেখানে অ্যাডভেন্সারে অংশগ্রহণ করছি। রোলার কোস্টারে ছড়ার সময় ভয়ও লাগছে। আবার মহাজাগতিক রহস্যের ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল আমি নিজে মহাকাশে ভ্রমণ করেই ব্ল্যাক হোল, সূর্য, সৌরজগৎ, মঙ্গলগ্রহ ঘুরে দেখছি। প্রদর্শনী দেখেই বিজ্ঞানকে জানার আরো আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বড় হলে কি হতে চাও এমন প্রশ্নের জবাবে তামিম তাওসিফ বলেন, বিজ্ঞানী হয়ে এমন কিছু আবিষ্কার করতে চাই যেটা মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে।
বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদর্শনী দেখেই কেমন লাগছে? জানতে চাইলে সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের শিক্ষার্থী তাজিম রাইয়ান বলেন, আজকে প্রথম চতুর্মাত্রিক মুভি দেখেছি। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ থেকে এখানে প্রদর্শনী দেখতে আসা। প্রদর্শনী দেখে মনে হলো, বিজ্ঞানের বিষ্ময়ের কোন শেষ নেই যতই ভিতরে যাবে বিজ্ঞানের জগত ততই গভীর হবে।
প্রদর্শনী দেখতে আসা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, সত্যিই অসাধারণ একটি উদ্যোগ। মুভিগুলো দেখেই মনে হচ্ছিল আমি নিজেই ভ্রমণ করছি। এখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুভবের বিষয়টাকে যুক্ত করেছে। যা শিক্ষার্থীদের ভাবনার জগতে আলোড়ন তুলবে। প্রদর্শনীতে মাত্র কয়েক মিনিটের মুভি দেখানো হলেও অবশ্যই এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ভাবনার জগতকে বাড়িয়ে দিবে।
প্রদর্শনী সম্পর্কে জানতে চাইলে চতুর্মাত্রিক মুভিবাসের সহকারী কিউরেটর মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব বলেন, বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের শিক্ষার্থীদের যে ভয় ও বিরক্তিভাব আছে সেটাকে কাটিয়ে আনন্দের মাধ্যমে বিজ্ঞান শেখার জন্য এ উদ্যোগ। বিজ্ঞান যে ভয়ের বিষয় নয়, খেলার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জয় করা হয় এই মেসেজটা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচার করার জন্য জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের উদ্যোগে এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে সময়ের সাথে আমাদের পারিপার্শ্বিক ও পরিবর্তন হয় সেটি বিভিন্ন ইফেক্ট ও সেন্সরের মাধ্যমে বাস্তবরূপে প্রদর্শন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করা এবং বিনোদনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ভীতি দূর করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ৩টি চতুর্মাত্রিক দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ১টি ভ্রাম্যমাণ মিউজুবাস, ২টি অবজারভেটরি বাস দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেই দেশের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের ভয় দূর করার পাশাপাশি বিজ্ঞানের প্রতি কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চতুর্মাত্রিক মুভিবাসে ৭ ক্যাটাগরির ৭০টির উপরে বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন ভিডিও দেখানো হয়। যার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতার মতো শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানকে জানতে পারছে।
সহকারী কিউরেটর মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব আরো বলেন, আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞান শিক্ষার অনেক বিষয় শেখানো হয় না। স্পেস সাইন্স বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। আমরা প্রদর্শনীগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে আগ্রহী করার চেষ্টা করি। মোট কথা বিজ্ঞান মানেই মজার ও আনন্দের বিষয়। খেলার ছলে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে সহজ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরার মাধ্যমে বিজ্ঞান ভীতি দূর করার জন্য আমাদের এ উদ্যোগ।