নিজস্ব প্রতিবেদক »
১১ দফা দাবি তুলে নগরীর জেএম সেন হল দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলার চেষ্টার প্রতিবাদে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। দাবি আদায় না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন সমাবেশের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল শনিবার সকালে ৬টা থেকে আন্দরকিল্লা মোড়ে ঐক্য পরিষদের নেতারাসহ বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের সদস্যদের পদচারনায় আন্দোলন বেগ পেয়েছে। পরে জেএমসন হল থেকে আন্দরকিল্লা-কোতোয়ালী মোড় হয়ে নিউমার্কেটের দিকে মিছিলে গোটা এলাকা লোকারন্যে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে দাবি তুলেছেন রানা দাশগুপ্ত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দুর্গাপূজার মধ্যে দেশের বিভিন স্থানে পূজামণ্ডপ ও হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামা পূজায় দীপাবলী উৎসব বর্জনসহ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশেরও ঘোষণা দেওয়া হয় চট্টগ্রামের এ অবস্থান কর্মসূচি থেকে।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবি জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।
অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে-সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান।
নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারী ও ইন্ধনদাতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় ট্রাইবুন্যাল গঠন করে দ্রুত সময়ে শাস্তি নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়েছে।
সোশাল মিডিয়া ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন এবং যেসব জনপ্রতিনিধি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসেননি, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তিমূলক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবিও জানিয়েছেন রানা দাশ গুপ্ত।
গণঅবস্থান থেকে ঘোষিত এসব দাবির অগ্রগতি পর্যালোচনা রেখে প্রয়োজনে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দাবির সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন রানা দাশ গুপ্ত।
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ৬টা থেকে চট্টগ্রাম নগরী এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন বয়েসী লোকজন এসে আন্দরকিল্লা মোড়ে সমবেত হয়।
অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে’র সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাসদ নেতা ইন্দু নন্দন দে, ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল মিত্রসহ বিভিন্ন মঠ, মন্দির পরিচালনা পরিষদের নেতারা।
এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়া উদ্দিন।
রণজিৎ দে বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন তা মুখে বললে হবে না বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফলে অতীতে অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
সংবিধানের চার মূলনীতি ‘হসপিটালাইজড’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কেন সেটা বাদ দেয়নি?
‘দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ হয়েছে। প্রতি উপজেলায় ৫৭০টি মডেল মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডা তৈরি করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিচয় দেন।’