গ্রেফতার দুজনের আদালতে স্বীকারোক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরে বাসা ভাড়া দিতে মামুনকে ছুরিকাঘাত করে তার সিএনজি অটোরিকশাটি ছিনতাই করেছে জুয়েল ও বেলাল। গত সোমবার রাতে যাত্রীবেশে স্টিলমিল খালপাড় এলাকা থেকে মামুনের সিএনজি অটোরিকশাটি ছিনতাই করে তারা।
৯৯৯ এ অভিযোগ পেয়ে গতকাল ভোরে অক্সিজেন এলাকা থেকে ছিনতাই করা অটোরিকশাসহ জুয়েল ও বেলালকে অক্সিজেন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা জবানবন্দি দেন। এতে তারা এসব কথা জানান। জুয়েল পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বেলাল বাস চালক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, করোনাকালে তাদের জীবন দূবিষহ হয়ে উঠেছে। আয়-রোজগার বন্ধ। পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার অপমান তাদের আর সহ্য হচ্ছিল না। অতিষ্ঠ হয়ে তারা খুঁজতে থাকেন টাকা আয়ের ‘শর্টকার্ট’ পথ। দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের।
পরিকল্পনা মাফিক ২৯জুন দিবাগত রাত আড়াইটায় নগরের বড়পুল এলাকা থেকে মামুনের সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ফিশারিঘাট যান জুয়েল ও বেলাল। এরপর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে সেখান থেকে ইপিজেড স্টিলমিল খালপাড়ে যান৷ সেখানে গিয়ে গাড়িটি থামিয়ে চালক মামুনকে মারধর এবং ছুরিকাঘাত তার অটোরিকশাটি চম্পট দেয় বেলাল ও জুয়েল।
পরে মামুনের তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জুন ভোরে অক্সিজেন মোড় এলাকা থেকে সিএনজিসহ জুয়েল ও বেলালকে গ্রেফতার করে ইপিজেড থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি ধারালো ছোরা উদ্ধার করা হয়। দুজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই।
পুলিশ জানায়, সিএনজি অটোরিকশা চালক জুয়েল থাকেন হালিশহরে বাসা ভাড়া নিয়ে। বেলাল আগ্রাবাদে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে লকডাউনের কারণে সিএনজি অটোরিকশা চালাতে না পেরে মারাত্মক অর্থকষ্টে পড়েন তারা। ইতোমধ্যে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া জমে যায় জুয়েলের। কোনমতে ধার দেনা করে বাড়ির মালিককে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েও রক্ষা হয়নি। বাড়ির মালিকের চাপে শেষ পর্যন্ত বাসা ছাড়তে বাধ্য হয় জুয়েল। এরপর টাকা উপার্জনের ‘শর্টকার্ট’ পদ্ধতি খুঁজতে গিয়ে মামুনের সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করে তারা। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে পুলিশের জালে।
ইপিজেড থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রতিবন্ধী মামুনের পরিবার নিঃস্ব হয়ে যেত, যদি পুলিশ দ্রুত সময়ে আসামিদের গ্রেফতার করতে অক্ষম হতো। জুয়েল ও বেলাল পেশাদার অপরাধী নয়। অভাবের তাগিদে, পরিবারের প্রয়োজনে তারা সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিয়ে ভুল করেছে।