নিজস্ব প্রতিবেদক »
চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় দেড়শ শয্যার বার্ন ইউনিট হচ্ছে। এই প্রকল্পের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে নকশার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে শীঘ্রই কাজ শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার সকালে স¦াস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত বার্ন ইউনিটের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় নিয়ে কথা হয় সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ২১ মার্চ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। চীনা প্রতিনিধি দল সকল আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে সময় নেয়। সব শেষ করে আজ (৩০ মার্চ) প্রকল্পের চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তারা দ্রুত কাজ শুরু করবেন।’
ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন,‘চট্টগ্রামে আধুনিক বার্ন হাসপাতালে হচ্ছে। আগুনে পোড়া রোগীরা সেখানেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। যার ফলে ঢাকার বার্ন হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমে যাবে। চীন সরকার বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পাশে থাকছেন। আশা করি অদূর ভবিষ্যৎতেও তারা পাশে থাকবেন।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, স¦াস্থ্য সচিব মো. আজিজুর রহমান, ডা. সামন্ত লাল সেন, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জ্যাঙ্গ এবং ৫ সদস্যর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে বার্ন ইউনিটের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরুর প্রসঙ্গে কথা হয় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাজ শুরু হতে সামান্য সময় লাগতে পারে। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য নকশা এখনো নির্ধারিত হয়নি। আগে যে ডিজাইন দেয়া হয়েছে সেটা আবার পরিবর্তন হবে। তারপর কাজ শুরু হবে। তবে সবকিছু দ্রুত হবে।’
এর আগে, চলতি মাসের ২১ মার্চ গোঁয়াছি বাগান এলাকায় অবৈধ প্রায় সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত ৭ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে চীনের অর্থায়নে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রকল্প স্থানও পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু জায়গা বরাদ্দসহ নানা প্রতিকূলতায় সেই নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০১৬ সালে চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করে চীন সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনে তারা হাসপাতালের বর্তমান বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জায়গায় বিশেষায়িত এ ইউনিট নির্মাণ করার কথা জানালে তখন সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে সম্মতির কথা জানানো হয়। পরে হাসপাতালের নকশাও তৈরি করে তারা। কিন্তু দ্বিতীয়বার এসে পরিমাপ করে জায়গা কম পাওয়ায় এ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারিতে চমেক হাসপাতালে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করে ৫ সদস্যের চীনা প্রতিনিধি দল। তারা প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন চীনা দল। এদিন বার্ন হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত গোঁয়াছি বাগানের জায়গাটি পরিদর্শন করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করা হয়।
চমেক হাসপাতালের পেছনে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। প্রকল্পটিতে ১৫০ শয্যা থাকবে। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, এইচডিইউ ২৫টি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার করা হবে ২টি। রোগী আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা বানানো হবে। চট্টেশ^রী রোডের দিক থেকে একটি রাস্তা হবে। সেটি হবে বার্ন হাসপাতালের প্রধান রাস্তা। চমেক হাসপাতালের পেছনে ছাত্র হোস্টেলের দিক থেকে আসবে আরও একটি রাস্তা। সর্বশেষ রাস্তাটি হবে মিজান হোস্টেলের দিক দিয়ে। সেখানে মাঝখানে পাহাড় থাকায় তা ঘুরিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে আনা হবে।
হাসপাতালটি হবে ৬তলা ভবনের। প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং তৃতীয় তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম ওয়ার্ড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ড এবং অফিস।