মাছুম আহমেদ <<
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ২০০৪ সালের আগস্টে সাংবাদিকতায় নাম লেখাই। সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহ-সম্পাদক! পেশাগত জীবনের শুরু, সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। পত্রিকাটির সূচনাও একই সময় থেকে।
ইদ্রিস ভাই (মুহাম্মদ ইদ্রিস, দৈনিক পূর্বকোণের এক সময়ের সহকারী সম্পাদক) সুপ্রভাতের প্রতিষ্ঠাকলীন যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর কাছেই সম্পাদনার পাঠ। সুপ্রভাতের নবীন-প্রবীণ প্রায় সকলেই তাঁর শাসনে তটস্থ তখন। কাউকে শেখানোর ক্ষেত্রে মানুষ কতটা দৃঢ় হতে পারে তাঁর সঙ্গে কাজ না করলে বুঝতে পারতাম না। সেই ইদ্রিস ভাই প্রত্রিকা ছাড়লেন এবং এরপর দ্রুতই পৃথিবীও ছাড়লেন!
সুপ্রভাতের শুরুর দিকে অনেকদিন বার্তা সম্পাদকের পদটি খালি ছিল। ইদ্রিস ভাই প্রায়ই বলতেন, অত্যন্ত দক্ষ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ সেই পদে আসবেন। তাই হলো, সৎ সাংবাদিকতার মডেল বাহার ভাই (রইসুল হক বাহার) বার্তা সম্পাদক পদটি পূর্ণ করলেন। সাংবাদিক শব্দের গভীরতা, দায়িত্বশীলতা, নিয়মানুবর্তিতা আর দূরদর্শিতার আঁচ তাঁর সান্নিধ্যেই ঘটেছে। বাহার ভাই ঘুরেফিরে বহুদিন সাংবাদিকতায় আমাদের আকাশ হয়ে ছিলেন। অতঃপর আচমকা তিনিও চিরবিদায় নিলেন!
আধুনিক প্রেস, এক ঝাঁক টগবগে তারুণ্যদীপ্ত মেধাবি তারুণ্য, ইদ্রিস ভাই, বাহার ভাইসহ আমাদের সবার নেতৃত্বে সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুপ্রভাতের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক। সাদা পোশাকের আবরণে এক শান্ত ও শুভ্র মানুষ!
এই মানুষটাকে কখনো উচ্চ স্বরে কথা বলতে শুনিনি। কিন্তু, যদিও তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সর্বদাই ছিলেন উচ্চকিত। তাঁর বলন-লেখন সবসময়ই জনগণের পক্ষে দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরের কোনো একদিন সুপ্রভাতের এডিটিং ডেস্কে একটি লেখার সম্পাদনা প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ‘জনগণ থেকে মানুষ হয়ে ওঠার’- এইটুকু বলার পর তিনি আমাকে থামালেন। বললেন, বাক্যটি এভাবে শুরু করা যাবে না, কারণ এখানে জনগণকে হেয় করা হয়।
নিজের একটি রাজনৈতিক আদর্শ থাকার পরও তিনি কোনো বিশেষ দলের আশ্রয়ে নিজের সত্তাকে পরাধীন করেননি। জনমানুষের পক্ষে থাকাকেই আমাদের সমাজ নিরপেক্ষ হিসেবে রায় দেয়। সৈয়দ আবুল মকসুদ জনগণকে সমুন্নত রাখার সেই নিরপেক্ষ জীবনই যাপনই করেছেন!
সুপ্রভাতের বার্তা বিভাগকে তিনি বলতেন, কারো মৃত্যু সংবাদ যেন ছাপিয়ে দেই। অন্য সংবাদ না পেলেও যেন মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকায় জায়গা পায়। কারণ হিসেবে বলতেন, মৃত্যুতেই তো শেষ, সেই সংবাদকে জায়গা করে দিতে হয়!!
তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া, সেই শেষ সংবাদটি পত্রিকায় মর্যাদাপূর্ণ জায়গা অর্জন করার মধ্য দিয়ে এক গণমানুষের বার্তাই যেন থেমে গেল।
তাঁর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়