বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি আছে পর্যটকদের। দুঃখজনক হলো পর্যটনের এলাকা বৃদ্ধি পেলেও একই তালে মান বাড়েনি। বিশেষ করে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেষ্ট নয়। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, বান্দরবান ভ্রমণে এসে গত ৯ বছরে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত বুধবার পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছেন তিন পর্যটক। অধিকাংশ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে বর্ষা মৌসুমে ঝিরি-ঝরনা থেকে পড়ে; পাহাড়ি ঢলে ও নদীতে গোসলে নেমে। এর বাইরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনজন।
তথ্যমতে, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ ভরা বর্ষায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত ৯ বছরে এই চার মাসেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুকনা মৌসুমে নদী-খাল ও বগালেকে গোসলে নেমে ১০ জন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনজন। তাঁদের প্রায় সবাই কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। প্রবল বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় আটকে পড়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বেঁচে ফিরেছেন অনেক পর্যটক। ২০১৯ সালের আগস্টে থানচি উপজেলার দুর্গম জিন্নাহপাড়ায় ১৬ জন তরুণ-তরুণী প্রায় এক সপ্তাহ আটকে পড়েছিলেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাঁরা ফিরে আসেন।
সবচেয়ে বেশি ১০ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে রুমা উপজেলায়। উপজেলাভিত্তিক প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ জুন পাইন্দু ইউনিয়নের তিনের সাইথার ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে নৌবাহিনীর সাব লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ ও একজন কলেজছাত্রী ভেসে যান। দুই দিন পর তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ওই একই ঝরনায় মারা যান আরেকজন পর্যটক। ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রিজুক ঝরনায় ডুবে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের একজন অধ্যাপকের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে বগালেকে ও ২০১৮ সালে সাঙ্গু নদে গোসলে নেমে চারজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গত ২০ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় রুমায় কেওক্রাডং পাহাড়ে একটি নারী পর্যটক দলের দুজন ও থানচিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালে একজন ও ২০১৮ সালে একজনের মৃত্যু হয়েছে নাফাখুমের পাহাড়ি ঢলে।
২০২৩ সালে ১২ আগস্ট আলীকদমে মারা যান আতাহার ইসলাম নামের একজন।
এ বিষয়ে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, সমতল থেকে আসা পর্যটকদের পাহাড়ি পরিবেশ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অনেক পর্যটক পর্যটন-সম্পর্কিত স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া নিরাপত্তা নিয়মকানুন মেনে চলেন না। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ট্যুরিস্ট গাইডদের দায়িত্বের অবহেলা যেমন রয়েছে, তেমনি পর্যটকেরাও গাইডদের কথায় চলতে চান না। এসব কারণে বর্ষায় ঝিরি-ঝরনায় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ও নদী-খালে নেমে দুর্ঘটনায় পর্যটকের মৃত্যু হচ্ছে।
প্রতি ১০ জনের দলে ১ জন নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। প্রশাসনের এ নিয়ম মেনে চললে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু সংস্থা বেশি লাভের জন্য নিয়মকানুন না মেনে গোপনে পর্যটকদের দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে কোনো ট্যুরিস্ট গাইড থাকেন না। এরফলে দুর্ঘটনা ঘটে আর দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারেরও উপায় থাকে না। দুর্ঘটনার প্রবণতা কমাতে হলে নিয়মের মধ্যে ভ্রমণ করতে হবে। আগে নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর এসব তদারকি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হতে হবে।